কৌশলগত কারণে স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থীর বিষয়ে নমনীয় থাকলেও শেষ পর্যন্ত একেবারে ‘ফ্রি স্টাইলে’ রাখবে না আওয়ামী লীগ।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট করতে আপাতত এমন সিদ্ধান্ত থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে তৃণমূলে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেবে দলটি। সেখানেই স্পষ্ট করা হবে কোথায় বা কারা হতে পারবেন ডামি প্রার্থী। এর বাইরে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে দলের সেই অবস্থানও স্পষ্ট করা হবে। এর সঙ্গে রয়েছে জোট শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টিও।
শরিকদের ছেড়ে দেওয়া আসনে দলের প্রার্থী বা ডামি প্রার্থী রাখা হবে কিনা তাও সুনির্দিষ্ট করবে দলটি। তবে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে আরও কিছু সময় নিতে চায় ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সময়ের ব্যবধানে কৌশল ও সিদ্ধান্ত সুনির্দিষ্ট করেই প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। সেটা মেনেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচন করবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী নয়, ডামি প্রার্থীর কথা বলা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আর ডামি প্রার্থী এক জিনিস নয়। ডামি প্রার্থী জেতার প্রার্থী নয়।
এটা বলা হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে নির্বাচন না হয় সেজন্য। আর স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাখ্যা অন্য জিনিস। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করতে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছিলেন তারা কোনো অবস্থাতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন না। কেউ করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ বিষয়ে তৃণমূলকে সহজ-সরল ভাষায় পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়া হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন।
আওয়ামী লীগ চায় উৎসব ও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হোক। স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়ানোর বিধান আছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আগ্রহ আছে, তাদের অনেকেই মনোনয়নপত্র কিনেছেন। কৌশলগত কারণে দলের পক্ষ থেকে অনেক কথা বলা হয়।
আবার কৌশলগত কারণেই আমরা সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে চাই। ফলে সময়ের ব্যবধানে কৌশল ও সিদ্ধান্ত সুনির্দিষ্ট করেই নির্দেশনা দেওয়া হবে। সেটা মেনেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচন করবেন। ফলে এটা নিয়ে চিন্তিত বা বিচলিত হওয়ার সময় এখনো হয়নি।
তিনশ আসনের বিপরীতে ৩৩৬২টি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছিল আওয়ামী লীগ। প্রতিটি আসনে গড়ে প্রার্থী ছিল ১১ জনের বেশি। তাদের মধ্যে ২৯৮ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে দলটি। ফলে প্রতি আসনে অন্তত ১০ জন দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন।
বিএনপিবিহীন ভোটে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হলে বাধা দেওয়া হবে না-এমন ইঙ্গিত আসার পর জেলায় জেলায় নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান এমপিসহ দলের নেতাদের অনেকেই। এতে তৃণমূলে তৈরি হচ্ছে সংকট। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী এবং দলেরই স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্তি নেতাকর্র্মীরা।
প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর গত তিন দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি লাগাম টানা না গেলে ভয়াবহ কোন্দলে বিপর্যস্ত হবে দলের তৃণমূল।
এছাড়া নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখলে অনেক স্থানেই দলের প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা কমে যাবে। কারণ একই আসনে দলের একাধিক প্রার্থী থাকলে আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হবে। আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ভোটে না থাকলে, তাদের সমর্থকরা যারা ভোট দিতে আসবেন তাদের অনেকেই নৌকার বিরুদ্ধে যে প্রার্থী দাঁড়াবেন তাকে ভোট দেবেন। ফলে দলের প্রার্থীরা একটা বড় ধরনের চাপে পড়বেন।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের প্রার্থীদের অসুবিধার বিষয়টিও তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। ডামি প্রার্থীর সুযোগ নিয়ে কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ তারা দেবেন না। এখনো তো সময় আছে। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে দলের প্রার্থীদের এখনই শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
দলীয় সূত্র বলছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে ডামি প্রার্থীর কথা বলা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-ভোটের আমেজ ধরে রাখা এবং ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো। তার মানে এই নয়, দলের এমপি-নেতা যে কেউ চাইলেই যে কোনো আসনে নির্বাচন করতে পারবেন। ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত কোন আসনে কোন দলের কতজন প্রার্থী থাকে সেই বিষয়টি দেখেই আসনভিত্তিক আলাদা সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
সব আসনেও রাখা হবে না ডামি প্রার্থী। পরিস্থিতি বিবেচনায় দলের এই সিদ্ধান্তগুলো সুনির্দিষ্ট করা হবে। যারা নির্দেশনা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
সূত্রঃ যোগান্তর