Sunday, November 24, 2024
Homeবিনোদনলাইফস্টাইলশীতে বাতের ব্যথায় করণীয়, জেনে নিন এখনই

শীতে বাতের ব্যথায় করণীয়, জেনে নিন এখনই

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি:

ষড়ঋতু বাংলাদেশের এখন মূলত গরম ও শীত এই দুই ঋতুরই প্রাধান্য বেশি। গরম কালে বাতের ব্যথা থাকলেও মানুষকে যতটা না কাবু করে তার চেয়ে শীত ঋতুতেই রোগীর ব্যথা বেদনা বেড়ে যায়। শীতপ্রধান দেশগুলোতেও এই জাতীয় সমস্যাই মূলত বেশি। আমাদের দেশে শীত পড়তে শুরু করেছে এবং এর তীব্রতাও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে।

 

 

আর শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে বাত ব্যথার কষ্টও বাড়তে থাকবে। তাই শীতে কিভাবে ব্যথা বেদনা থেকে সুস্থ থাকা যায়, তা নিয়ে আজ লিখছি।

স্বাস্থ্য সচেতনতা, চিকিৎসা সুবিধা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি পরিবর্তনের ফলে দিনে দিনে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শারীরিক, মানসিক শক্তি ও দেহ কোষের কর্মক্ষমতা বা সামর্থ্য ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

 

 

টিস্যুর এই সামর্থ্য ক্রমাবনতির হার বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুপাতে হয়। একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধ যেমন কর্মক্ষম থাকতে পারেন, তেমনি আবার ২০/৩০ বছর বয়সের ব্যক্তিরা ভুগতে পারেন বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা ও জয়েন্ট বা মাংস পেশির ব্যথায়- যাকে আমরা সহজ ভাষায় বাত বলে জানি।

সাধারণত মহিলাদের ৪০ বছর পর পুরুষদের ৫০ বছর পর বয়সজনিত জয়েন্টের সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমাদের দেশের ৫০ উর্ধ্ব জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগ লোক ব্যথা জনিত সমস্যায় ভোগেন।

 

বিশেষ করে যেসব জয়েন্ট শরীরের ওজন বহন করে এবং অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয় যেমনঃ ঘাড়, কোমর, স্কন্ধ বা সোল্ডার জয়েন্ট এবং হাটু ব্যথার রোগী সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। বাতের ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে ৯০ ভাগ হচ্ছে “মেকানিকেল সমস্যা”। মেকানিকেল সমস্যা বলতে মেরুদণ্ডের মাংসপেশি, লিগামেন্ট মচকানো বা আংশিক ছিড়ে যাওয়া, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক সমস্যা, কশেরুকার অবস্থানের পরিবর্তনকে বুঝায়।

অন্যান্য কারণের মধ্যে বয়সজনিত হাড় ও জোড়ার ক্ষয় বা বৃদ্ধি, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস বা গেটেবাত, অষ্টিওআথ্রাইটিস, অষ্টিওপোরোসিস, এনকাইলজিং স্পন্ডাইলোসিস, বার্সাইটিস, টেন্ডিনাইটিস, স্নায়ুবিক রোগ, টিউমার, ক্যান্সার, মাংস পেশির রোগ, শরীরে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, শরীরের অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি।

 

শীতকালে শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমান হ্রাস পায়।

 

কারণ এ সময় দিন ছোট থাকে। ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরের ব্যথা বেদনা বেড়ে যেতে পারে। শীতে বাতাসের চাপ কমে যায়, সাথে অক্সিজেনের পরিমান ও কমে যায়। এ সময় নিশ্বাসের সঙ্গে অল্প পরিমাণ অক্সিজেন পাওয়া যায়, যাতে শরীর আরও বেশি স্থবির হয়ে পড়ে। এ কারণে হাত ও পায়ের দিকে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, জয়েন্টগুলোয় প্রদাহ বৃদ্ধি পেয়ে যায়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য অনেক সময় জয়েন্ট ও মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। শীতে এই সকল ব্যথা আরও বেড়ে যায় এবং রোগী অসুস্থ ও কর্মহীন হয়ে পরে। এতে করে ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক, ধর্মীয় নানাবিধ সমস্যায় পরতে হয়।

 

মানুষের রোগের ভিতর ব্যথা বা যন্ত্রনা একটি অস্বস্তি ও কষ্টকর সমস্যা। আল্লাহ তাআলা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জয়েন্ট বা সন্ধি আমাদের স্বাভাবিক চলাচল এবং কর্ম সম্পাদন করে জীবিকা নির্বাহের জন্য দিয়েছেন। সাধারণত দুই বা দুইয়ের অধিক হাড় বা তরুনাস্থি শরীরের কোন এক জায়গায় সংযোগ স্থাপনকারী টিস্যুর মাধ্যমে যুক্ত হয়ে একটি অস্থি সন্ধি বা জয়েন্ট তৈরি করে। আর এই সংযোগ স্থাপনকারী টিস্যুগুলো হচ্ছে মাংসপেশী, টেন্ডন, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল, ডিস্ক, সাইনোভিয়াল পর্দা বা মেমব্রেন ইত্যাদি। এগুলো জয়েন্টকে শক্তি ও দৃঢ়তা প্রদান করে, জয়েন্ট এর তল বা সারফেস সমূহকে মসৃন বা পিচ্ছিল রাখে। এছাড়া মেরুেণ্ডের দু’টি হাড়ের মাঝে অবস্থিত ডিস্ক শক এবজরবার হিসেবে কাজ করে হাড়কে ক্ষয়ে যাওয়া থেকে রোধ করে। এই সব অস্থি বা জয়েন্টগুলোতে প্রধানত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্ষয়, প্রদাহ জনিত এবং অভ্যন্তরীন পরিবর্তনের কারণে ব্যথা বেদনা সৃষ্টি করে মানুষের চলাচল কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায়।

করণীয়:

 

১. অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বাইরে বের না হয়ে বাসায় হাঁটা চলাফেরা ও ব্যায়াম করতে হবে।

২. হাইড্রেশনের অভাবে ব্যথা বাড়তে পারে তাই দৈনিক পরিমিত পরিমাণ পানি খেতে হবে।

৩. গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। শরীর যাতে অতিরিক্ত তাপ না হারায় তা খেয়াল রাখতে হবে।

৪. বাসায় ২-৩ বেলা হট ওয়াটার ব্যাগ বা হিটিং প্যাড দিয়ে গরম সেঁক খুবই উপকারে আসবে।

৫. বাসায় রুম হিটের ব্যবহার করা যেতে পারে।

৬. নিয়মিত কুসুম গরম পানিতে গোসল, স্টিমবাথ খুবই উপকারী। তবে মাথায় গরম পানি ঢালা যাবে না।

৭. কাজকর্ম-শোয়া-বসায় দেহের সঠিক দেহ ভঙ্গি মেনে চলতে হবে।

৮. বাসায় খালি পায়ে হাটা যাবে না। নরম সোলের জুতা ব্যবহার করতে হবে।

৯. শীতকালীন ফলমূল, শাকসবজি নিয়মিত খেতে হবে। তবে যাদের গাউট জাতীয় বাত আছে তারা প্রয়োজনে লাল মাংস (চার পা পশুর মাংস) ডাল জাতীয় খাবার, মিষ্টি, ঘি, ডালডা, চর্বি, ফাস্টফুড, সামুদ্রিক মাছ, পুঁইশাক কম খেতে হবে।

১০. শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী।

১১. শীতের সকালের রোদ খুবই উপকারী, রোদে হাঁটা-হাটি করা যেতে পারে।

১২. শরীরের ওজন খেয়াল রাখতে হবে।

১৩. যারা দীর্ঘদিন যাবত বাত ব্যথায় ভুগছেন তারা ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসা নিতে পারেন।

১৪. ব্যথায় কষ্ট ও পঙ্গুত্ব বরণ না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করবেন।

১৫. ব্যথা বেশি হলে ব্যথানাশক ওষধ অল্প কয়েকদিন খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল জাতীয় ফুড সাপ্লিমেন্ট যেমন- ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, গ্লোকোসামাইন কোন্ড্রটিন সালফেট, হায়ালুরনিক এসিড, এমএসএম বাত ব্যথার প্রদাহ ও ক্ষয় প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments