Sunday, November 24, 2024
Homeখেলাধুলাক্রিকেটটেস্টে নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দাড়ুন জয়

টেস্টে নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দাড়ুন জয়

 

টেস্টে দ্বিতীয় বার নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। এর আগে কিউইদের মাঠে তাদের হারিয়েছিল তারা। এ বার নিজেদের ঘরের মাঠেও নাজমুল হাসান শান্তর নেতৃত্বে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই জয় বাংলাদেশের। দু’ম্যাচের টেস্ট সিরিজ়ে ১-০ এগিয়ে গেলেন শান্তরা।

ইশ সোধিকে আউট করেই আম্পায়ারের দিকে তাকালেন তাইজুল ইসলাম। তার চিৎকারে উচ্ছ্বাস, আনন্দ; তার চিৎকার গলা ফাটানো।
ক্রিকেটারররা জড়িয়ে ধরলেন একজন-আরেকজনকে; তাদের চোখেমুখে ভীষণ ‘করে দেখানোর’ স্বস্তি। এক চক্র আগেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা নিউজিল্যান্ডকে হারানো ততক্ষণে নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের।

 

এই জয় পথ খুঁজে দেওয়া? হয়তো। হয়তো এই জয়টা বাংলাদেশেরও। সব জয় তো বাংলাদেশেরই হয়, তবুও কেন আলাদা করে বলতে হলো? পাঁচদিন ধরে ধৈর্য নিয়ে খেলা দেখলে ভালোই টের পাওয়ার কথা যে কারো। এমন উদ্বুদ্ধ আর রঙ ছুয়ে দেওয়া, হিসাব কষা ক্রিকেট বাংলাদেশ কবে খেলেছিল; পেছন ফিরে যেতে স্মৃতিকে একটু কষ্টই করতে হবে।
হাজারখানেক দর্শক প্রতিদিন যে লাক্কাতুরার পথ মাড়িয়ে গেছেন। স্টেডিয়ামে এসেছেন, ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ’ চিৎকার করেছেন; তারা হয়তো খুব ভালো অনুভূতি নিয়েই বাড়ির পথ ধরেছেন প্রতিদিন। শেষদিনে এসে বাংলাদেশ যখন জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেললো, তখন তারা কেবল আনন্দের সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে।

টেস্ট জয় এমনিতেই ‘স্পেশাল’। নিউজিল্যান্ডকে যে সিলেট টেস্টে ১৫০ রানে হারালো বাংলাদেশ; ২৩ বছর আর ১৪০ টেস্টের পথচলায় বাংলাদেশের কেবল ১৯তম জয়। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম আর সবমিলিয়ে দ্বিতীয়। প্রথমটি ভালোই মনে থাকার কথা- দু বছর আগের মাউন্ট মঙ্গুনই টেস্ট দেশের ক্রিকেটেরই স্মরণীয় জয়ের একটি।

সিলেট টেস্টের প্রায় প্রতি ঘণ্টাতেই বাংলাদেশ লড়েছে সমানতালে। কখনো হয়তো একটু-আধটু পিছিয়ে গেছে, কিন্তু কখনোই হারিয়ে যায়নি। প্রথম ইনিংসে ৩১০ রান করেছিল বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড করে ফেলেছিল ৩১৭। পরেরটিতে সেঞ্চুরিতে রাঙান নাজমুল হোসেন শান্ত, তার দল করে ৩৩৮; এরপর নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়ে গেছে ১৮১ রানে।

অথচ এই টেস্ট শুরু হওয়ার আগেও ভীষণ এলোমেলো হয়েছিল চারপাশ। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার দায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছিল, অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সিরিজ থেকে সরে যান লিটন দাসও। নেতৃত্বের ভার আসে নাজমুল হোসেন শান্তর কাঁধে।

এখন এই ম্যাচের পর ‘হাইলাইটসটা’ও হয়ে থাকবেন তিনিই। ব্যাটিংয়ে, নেতৃত্বগুণে যেন এক ‘রত্ন’ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাই দেখিয়েছেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে তিনি দারুণ খেলতে খেলতে আউট হয়েছিলেন ফুলটস বলে; এ নিয়ে বহু আফসোসের কথাও শোনা গিয়েছিল।

প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করে পরের ইনিংসে সেটি পুষিয়ে দেন শান্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে রান আউটের আক্ষেপে পোড়া মাহমুদুল হাসান জয় প্রথম ইনিংসে দলের সেরা ব্যাটার। অবদান রাখলেন মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক। তাইজুল ইসলাম দুই ইনিংসে উজ্জ্বল বোলিংয়ে; সম্ভবত তার পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারের মতোই।

পঞ্চম দিন সকালে যখন বাংলাদেশ কেবল তিন উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে স্মরণীয় এক জয়ের। তখনও একটা দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে পথ খুলে দেন তাইজুলই। নাঈম হাসানের বলে সুইপ করতে যান বাংলাদেশের জন্য একমাত্র বাধা হয়ে থাকা ড্যারল মিচেল। তিনি ততক্ষণে তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরিও। সুইপ করতে গিয়ে বল উপরে উঠে যায়, ডিপ স্কয়ার লেগে পেছন ফিরতে ফিরতে দারুণ এক ক্যাচ নেন তাইজুল।

তাকে ফেরানোর পর বাংলাদেশের জয় ছিল কেবলই সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সেটি লম্বা হতে দেননি দুই ইনিংসেই উইলিয়ামসনকে ফেরানো তাইজুলই। এবার ২৪ বলে ৩৪ রান করে ফেলা টিম সাউদিকে ফেরান তিনি। এতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ফাইফারটাও পেয়ে যান তিনি।

আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বহু অভিমানের কথাই শুনিয়ে গিয়েছিলেন তাইজুল। জানিয়েছিলেন দলের তার ওপর থাকা ‘আস্থা’র কথাও। সেটি বোধ হয় বিধাতাই সবচেয়ে ভালো জানেন। রঙিন জয়ের শেষটাও তাই হয়েছে তার হাত ধরে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments