স্বাস্থ্যসেবা প্রতিদিন:
কেস স্টাডি : আসিফ আহমেদ, বয়স ৩৫। কিছুদিন ধরেই তার কোমরের কাছ থেকে ব্যথা সৃষ্টি হয়ে পায়ের দিকে চলে যাচ্ছে। ব্যথার ধরন কিছুটা অদ্ভুত। অনেকটা ঝিম ঝিম কিংবা অবশ অবশ অনুভব। তিনি ভাবলেন একটানা বসে থাকার ফলে এমনটি হচ্ছে। আসিফ এরপর থেকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়াতেন ও হাঁটতেন। কিন্তু কিছুতেই অস্বস্তি কমছে না, বরং ব্যথা বেড়েই চলেছে। আসিফের মতো অল্প বয়সেই কোমরব্যথা অনেকের হয়। দিন দিন এ সমস্যা বেড়েই চলেছে। এর কারণ ও পরিত্রাণের উপায় জেনে নিন।
* কোমরে ব্যথা কেন হয়?
১, যারা অফিসে দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে কাজ করেন। এর ফলে কোমরে ব্যথা বেড়ে যায়।
২, বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
৩, দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা সামনে বেশি ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমরব্যথা হতে পারে। ড্রাইভিংয়ের সময় কোমরের পেছনে কিছু সাপোর্ট নেওয়া উচিত।
৪, যারা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা অন্যান্য কাজ করেন, তাদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অল্প বয়সেই কোমরব্যথা অনুভূত হয়।
৫, অনেকেই আছেন যারা ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।
* উপসর্গ
১, প্রথমে কোমরে অল্প ব্যথা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে।
২, অনেক সময় রোগী হয়তো হাঁটতেই পারে না।
৩, ব্যথা কখনো কখনো কোমর থেকে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে, পায়ে ঝিনঝিন করে।
৪, চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে।
৫, কোমরে সামান্য নড়াচড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়।
৬, সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা হতে পারে।
৭, হাঁটতে গেলে পা খিঁচে আসে বা আটকে যেতে পারে।
৮, ব্যথা দুই পায়ে বা যে কোনো এক পায়ে নামতে পারে।
৯, কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্তভাব হয়ে যাওয়া।
১০, পা অবশ ও ভারী হয়ে যায় এবং শক্তি কমে যায়।
প্রাত্যহিক কাজ, যেমন- নামাজ পড়া, তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদিতে কোমরে ব্যথা হয়।
* কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
ভারী ওজন তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর ব্যথা, কোমর থেকে নিতম্ব, ঊরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা বাড়তে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পায়ে দুর্বলতা বা অবশভাব হলে, হাঁচি বা কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে গেলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা নিন।
* চিকিৎসা ও পরিত্রাণের উপায়
১, হালকা ব্যথা হলে অবহেলা না করে ওষুধ খেতে হবে এবং পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
২, অনেক ক্ষেত্রে কোমরে গরম সেঁক দিলে উপকার পেতে পারেন। কোমরব্যথার বিভিন্ন মলম ব্যবহার করতে পারেন। তবে মালিশ করবেন না।
৩, ব্যথা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
৪, অনেকেই কোমরব্যথা হলে বিভিন্ন ব্যথানাশক মেডিসিন খেয়ে ফেলেন। এটা একেবারে ঠিক নয়।