বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বাহাড়া ইউনিয়নের কান্দখলা গ্রামের রাসবিহারী দাশের মায়ের নামে বন্দোবস্ত কান্দখলা মৌজার জেএল ৩৯ খতিয়ান নং ২৩৭ এর ৬নং দাগের ৫২ শতাংশ পুকুর ও চারা রকমের ভূমি সরকার থেকে লীজ নেন। সেই ভূমি বেআইনি ভাবে রাসবিহারী দাসের সঙ্গে যোগসাজসে উপজেলার
শাল্লা ইউপির দামপুর গ্রামের মৃত কবির মিয়ার ছেলে ভূমিখেকো বকুল আহমেদ সহ আরো কয়েকজন মিলিত হয়ে দখলের চেষ্টা চালায়।
নিরুপায় হয়ে গ্রামবাসী ২৬ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে এনিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন বকুল আহমেদের বিরুদ্ধে।
কান্দখলাবাসী জানান দুর্গাপূজার দশমীর দিন ভূমিখেকো দখলকারী বকুল আহমেদ অবৈধ ভাবে অন্যের লীজকৃত জমি দখল করতে আসে। পরে গ্রামবাসী অবৈধভাবে জায়গা দখলকারী বকুল আহমেদকে বাধা দেয়। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনিষ্টকারী দাম্ভিকতার সহিত গ্রামবাসীকে হিন্দু শূন্য করার হুমকি ধামকি দেয় বকুল আহমেদ। এই জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি।
পরে ২৭ অক্টোবর শুক্রবার বেলা ১২টায় এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয় গ্রামবাসী পক্ষ থেকে। এমন সংবাদ পেয়ে দ্রুত সেখানে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব ও শাল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম। নির্বাহী কর্মকর্তা তখ গ্রামবাসীকে মানববন্ধন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন এবং দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন । এমন আশ্বাসে মানববন্ধন স্থগিত করে গ্রামবাসী। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বকুল আহমেদকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন এই জায়গা আর দখল করতে আসবেন না । অন্যের নামে বন্দোবস্ত জায়গায় আপনার কোনো অধিকার নাই দখল করার। পরে ২৭অক্টোবর বিকেলে বন্দোবস্ত বাতিলের আবেদন করেন গ্রামের পক্ষ থেকে।
এবিষয়ে কান্দখলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান চন্দন দাস বলেন এই জায়গা দখলে নিলে আমরা কান্দখলা গ্রামের মানুষ এখানে আর শান্তিতে বসবাস করতে পারব না। তাছাড়া বকুল আহমদ অবৈধভাবে জায়গাটি দখলে নিতে চায়। বকুল আহমেদ যেদিন থেকে শাল্লা এসেছে সেই দিন থেকে একটার পর একটা সাম্প্রদায়িক অঘটন ঘটানোর জন্য লেগেই আছে। এজন্য সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ বিন ইকরাম তাকে পিটিয়ে ছিলেন। শাল্লা সদরে ২ জন হিন্দুর দখলকৃত বাজার ভীটা বকুল আহমেদ ও তার ভাই সেকুল মিয়ার নামে লীজ নিয়ে ঘর তৈরি করেছে। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাসহ ফৌজদারি মামলাও রয়েছে। বকুল আহমেদ এখন শাল্লার ত্রাস বলে জানান তিনি।
অভিযোগকারী সবুজ দাশ বলেন আমরা বকুল আহমেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আমাদের ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় সে। জোরপূর্বক আমাদের গ্রামের একমাত্র স্নানের জায়গা দখল করতে চায় বকুল আহমেদ। একারণেই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
এব্যাপারে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাশ বলেন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই জায়গাটি দখলে নিতে চেয়েছে তারা। তবে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকায় তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
এবিষয়ে শাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস মিয়া বলেন হিন্দু গ্রামের পাশে জায়গা দখলের উদ্দেশ্য মহৎকর্ম নয়। দু’দিন পর তাদের উৎপাতে হিন্দু নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারবে না বলে জানান তিনি। এসময় অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাশ, ডুমরা গ্রামের সালিস ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্র দাশ উপস্থিত ছিলেন।
এবিষয়ে বাহাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিত চৌধুরী নান্টু বলেন হিন্দু গ্রামের পাশে জায়গা দখল করার উদ্দেশ্য তো বুঝাই যায়। উপজেলা প্রশাসন রাসবিহারী দাশের বন্দোবস্ত বাতিল করলেই এসমস্যা সমাধান হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ওই বন্দোবস্ত বাতিল করা হবে বলে জানান তিনি।