ইসলামী জীবন ব্যবস্থা:
দ্বিনি শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য। কিন্তু কখনো কখনো দ্বিনি শিক্ষা দ্বিন-দুনিয়ার সমূহ কল্যাণের কারণ হয়ে যায়। নিম্নে এ বিষয়ে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে আমরা একটি হাদিস দেখে নেই, দ্বীনি ইলম অর্জনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ছোট একটি হাদিসও রয়েছে,
হাদিস হলো: দ্বীনি ইলম তলব করা প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর উপর ফরজ। (মেশকাত)
ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) ছিলেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর বিশেষ ছাত্র।
আবু ইউসুফ (রহ.)-এর প্রকৃত নাম ছিল ইয়াকুব বিন ইবরাহিম। খলিফা হারুনুর রশিদের আমলে তিনি বাগদাদের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। খলিফার সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি বলেন, আমার পিতা ইবরাহিম বিন হাবিব যখন মারা যান, তখন আমি ছোট শিশু।
মা-ই আমার লালন-পালন করতেন। অভাবের কারণে তিনি আমাকে এক ধোপার কাছে কাজে দেন। কিন্তু ধোপাকে ছেড়ে আমি আবু হানিফার মজলিসে যোগ দিতাম এবং মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনতাম। আমার মা আমার পেছনে পেছনে আবু হানিফার মজলিসে হাজির হতেন, তারপর আমার হাত ধরে ধোপার কাছে নিয়ে যেতেন।
এদিকে আবু হানিফা (রহ.) আমার উপস্থিতি এবং ইলম শেখার আগ্রহ দেখে আমাকে গুরুত্ব দিতেন। এভাবে যখন তাঁর মজলিসে আমার উপস্থিতি আমার মায়ের কাছে বেশি পীড়াদায়ক হয়ে উঠল এবং আমার পলায়ণপরতা তাঁর কাছে দীর্ঘায়িত হয়ে দাঁড়াল, তখন তিনি ইমাম আবু হানিফাকে বলেন, এই বাচ্চাকে নষ্ট করার মূলে আপনি। এ একটা এতিম অনাথ বাচ্চা। অর্থ-সম্পদ বলতে তার কিছু নেই। সুতা কেটে আমি তার খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করি।
আমি কামনা করি যে সে নিজের খরচ চালানোর জন্য অন্তত এক ‘দানেক’ (তৎকালীন মুদ্রার নাম) আয় করুক।
আবু হানিফা (রহ.) আমার মাকে বলেন, ওহে রানা, তোমার ছেলে লেখাপড়া করে এমন বিদ্বান হবে যে সে পেস্তাবাদামের তেলে রান্না করা ফালুদা খাবে। এ রকম ফালুদা তখনকার দিনের রাজা-বাদশাহ ও ধনীদের খাবার ছিল। তাঁর কথায় আমার মা বললেন, আপনি বুড়ো মানুষ। আপনার মাথা বিগড়ে গেছে। তাই আবোলতাবোল বকছেন। এ কথা বলে তিনি চলে গেলেন। তার পর থেকে আমি আবু হানিফার কাছেই থাকতে লাগলাম। আমার লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত তিনিই আমার খরচ চালাতেন। এভাবে একদিন আল্লাহ আমাকে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী করেন এবং আমি আববাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের আমলে বিচারপতির পদে আসীন হই। খলিফার সঙ্গে সখ্যের ফলে আমি তাঁর দরবারে বসতাম এবং তাঁর দস্তরখানে একসঙ্গে খানা খেতাম। একদিন পরিচারকরা খলিফা হারুনের সামনে এক নতুন ধরনের খানা হাজির করল। খলিফা আমাকে বলেন, ওহে ইয়াকুব! এ খানা থেকে কিছুটা খাও, এ ধরনের খাবার আমাদের জন্য প্রতিদিন তৈরি করা হয় না। আমি বললাম, আমিরুল মুমিনিন, এ খাবারের নাম কী? তিনি বলেন, এর নাম ফালুদা, যা পেস্তাবাদামের তেলে রান্না করা হয়েছে। এ কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম। তিনি বললেন, হাসছ কেন? আমি বললাম, ভালো জিনিস আল্লাহ বিদ্যমান রাখুন, হে আমিরুল মুমিনিন! কিন্তু তিনি কারণ জানার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। আমি তখন তাঁকে ঘটনা আনুপূর্বিক শুনালাম। শুনে তিনি আশ্চর্যান্বিত হলেন এবং বললেন, আমার জীবনের কসম! নিশ্চয়ই বিদ্যা মানুষের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং তার দ্বিন-দুনিয়ার কল্যাণ বয়ে আনে। তিনি আবু হানিফা (রহ.)-এর জন্য রহমত কামনা করেন এবং বলেন, তিনি তাঁর মানস চোখে এমন কিছু দেখতে পেতেন বাহ্যিক চোখে যার দেখা মেলে না।