Sunday, September 28, 2025
Homeপর্যটনপ্রাণপ্রকৃতির রঙিন আয়োজন মৌলভীবাজারের ‘বার্ড পার্ক অ্যান্ড ইকো ভিলেজ’

প্রাণপ্রকৃতির রঙিন আয়োজন মৌলভীবাজারের ‘বার্ড পার্ক অ্যান্ড ইকো ভিলেজ’

নিজস্ব প্রতিবেদক,

মৌলভীবাজারের একটুকরো অন্য রকম অরণ্য দেখে মনে পড়ে—বাইরে সবুজ, ভেতরে প্রাণপ্রকৃতির রঙিন আয়োজন। মাঠের পর মাঠজুড়ে ঘুমপাড়ানি শীতলপাটির মতো সবুজ ফসলি জমি, গ্রামীণ আবহ। তার ভেতরে প্রাণপ্রকৃতিকে কাছে টেনে নেওয়ার এক অন্য জগৎ ‘বার্ড পার্ক অ্যান্ড ইকো ভিলেজ’।

 

প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে একদল তরুণ ও প্রবাসী উদ্যোক্তা গড়ে তুলেছেন ‘বার্ড পার্ক অ্যান্ড ইকো ভিলেজ’ নামে পরিবেশ ও প্রকৃতিবান্ধব এক ছোট অরণ্য। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের আজমেরু গ্রামে এর অবস্থান। পরিকল্পিত, সাজানো-গোছানো। এখানে আছে হালকা বুনো মায়া, আছে নানা রকম পাখির কলকাকলি। দেশি-বিদেশি হাঁসের সাঁতার। মাথার ওপর খোলা আসমানের নীল দরিয়ার হাতছানি। পাখির সঙ্গে, ফুলের সঙ্গে সময় কাটানোর আরণ্যক আমেজ।

 

ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোকামবাজার থেকে অফিসবাজারের দিকে যাওয়া এক পাকা গ্রামীণ সড়ক ধরে কিছুদূর গেলেই দেখা মেলে বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠের। চারদিকে মায়া লেগে থাকা গাঢ় সবুজ, মাঝেমধ্যে সাদা বকের ঝাঁক যেন সবুজ আঁচলে সাদা ফুলের মতো ফুটে আছে। শরতের পেঁজা সাদা মেঘ ভাসছে আকাশে, মেঘের পাড়ে রং লেগেছে দিন শেষের। লাল-গোলাপি রঙের খেলা। মাঠের প্রান্তে চোখে পড়ে, এক বিশাল পাখি ডানা ছড়িয়ে বসে আছে। এই বুঝি উড়াল দেবে। পাখির আদলে তৈরি এ স্থাপনাই পার্কের অভ্যর্থনা ও রেস্তোরাঁ ভবন।

 

প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত পার্কের ভেতরে ঢুকলেই মনে হয় এক অরণ্যে এসেছি। গাছে গাছে লাল বকফুল, শাখায় ঝুলে আছে ঝুমকো জবা, রাধাচূড়াসহ আরও কত ফুল। ঘাসে চরে বেড়াচ্ছে একঝাঁক টার্কি ও নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি মুরগি। পুকুরে সাঁতার কাটছে ব্ল্যাক সোয়ান, রাজহাঁস, চীনা হাঁস, আমেরিকান ঝুঁটি হাঁস। পাখি ও প্রাণীদের জন্য বনের মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে—কোথাও তারা বাসা বানাচ্ছে, ডিম দিচ্ছে, আবার কোথাও দর্শনার্থীদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে।

 

ঘাসের ভেতর, গাছের ডালপালায় বসা কিছু কৃত্রিম পাখি দেখে হঠাৎ মনে হতে পারে, ওদেরও প্রাণ আছে, ওরাও ওড়ার অপেক্ষায়। খাঁচায় রাখা হয় না—এমন সব প্রাণীই এখানে রাখা হয়েছে, যাদের লালন–পালনের বৈধতা আছে। যে পাখি বা প্রাণীকে রাখা যায় না, যেমন বক, ধনেশ বা ইগল, তাদের জায়গায় বসানো হয়েছে পাথুরে ভাস্কর্য।

 

শুধু পাখি আর প্রাণী নয়, এখানে আছে কৃত্রিম ঝরনা, রঙিন মাছের পুকুর, বার্ড লার্নিং সেন্টার, ইল্যুশন মিউজিয়াম, কিডস জোন, রেস্তোরাঁ ও মসজিদ। খোলা আকাশের নিচে রয়েছে ছবি তোলার কর্নার। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রায় সাত কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলা এ প্রকল্পে রোপণ করা হয়েছে জারুল, হিজল, সাদা ও হলুদ শিমুলসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফুলের গাছ। এ ছাড়া আছে ম্যাকাউ, কাকাতুয়া, পিজেন্ট, সাদা ও হলুদ টিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি ও প্রাণী।

 

পার্কের সন্ধ্য,

বার্ড পার্ক অ্যান্ড ইকো ভিলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে জেলার পর্যটনকে সমৃদ্ধ করা। পরিবেশ ও প্রাণপ্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরি করা। আমরা চাই, মানুষ পাখি ও প্রাণীকে ভালোবাসুক, সংরক্ষণ করুক।’ তিনি জানান, পার্কটি এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। আগামী অক্টোবরের প্রথম দিকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তাঁরা এখানে এসে প্রকৃতির সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে পারবেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments