নিজস্ব প্রতিবেদক,
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটন ঘাট ও স্থলবন্দরের পাশের সরকারি প্রায় ৫০ একর জমি কয়েক বছর আগে অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। জমি অধিগ্রহণের পর ২০২৩ সালে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। এর আগে জমি থেকে পাথর ভাঙার মিলসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রশাসন।
তবে গত বছর ৫ আগস্ট সীমানা প্রাচীর ভেঙে তা আবার দখল করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সেই সময়ের সভাপতি সাহাব উদ্দিন ও তাঁর লোকজন জমি দখল করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা অধিকাংশ পাথর পর্যটন করপোরেশনের ওই জমিতে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। ছোট আকারের ২০ থেকে ২৫টি পাথর ভাঙার যন্ত্র বসানো হয়েছে সেখানে। শ্রমিকরা পাথর ভাঙা ও ট্রাকে ওঠানোর কাজ করছেন।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের শেষ প্রান্তে স্থলবন্দর এবং অন্য পাশে পর্যটন কেন্দ্রের জমি। পাশে সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি। একসময় সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল জমিটি। দুই দশক পর ২০২৩ সালে জমিটি দখলমুক্ত করে প্রশাসন। উদ্ধারের পর সড়কের পশ্চিম পাশে ৫২ একর জমি স্থলবন্দর ও পূর্বপাশে ট্যুরিজম বোর্ড তাদের প্রায় ৫০ একর জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমিটি দখল করার অভিযোগে ১২ আগস্ট বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের দলীয় সব পদ স্থগিত করে বিএনপি। এখন জমি দখল করে সেখানে ব্যবসা করছেন চুনাপাথর আমদানিকারক আবুল বাশার, সবুর আলী, বশির আহমদ, গৌছ উদ্দিন, বকুল মিয়া, লোকমান আহমদসহ অনেকে। কেউ ভাড়া নিয়ে, কেউবা আগের দখলদার হিসেবে জমি ব্যবহার করছেন।
গত ১৭ ডিসেম্বর ভোলাগঞ্জ পরিদর্শনের সময় উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন পর্যটনের জমি উদ্ধারের নির্দেশ দেন। ওই দিন তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে আর কেউ যাতে কিছু করতে না পারে, সে জন্য সবার আগে স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে হবে। তবে গত আট মাসেও জমি উদ্ধারে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।
এ বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা) মাজেদুর রহমান সমকালকে জানিয়েছেন, জমিটি উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (বিপণন, পরিকল্পনা ও জনসংযোগ) সালেহা বিনতে সিরাজ জানান, পর্যটন কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণের পর সেখানে তারা সীমানা প্রাচীর দিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ধরেননি। তবে সম্প্রতি তিনি সমকালকে জানিয়েছিলেন, পর্যটনের জমি দখলের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। আমদানিকারক লোকমান আহমদ দাবি করেন, তিনি পর্যটনের জমির বাইরে ব্যবসা করছেন। পাথর ব্যবসায়ী বকুল মিয়া জানান, তিনি একসময় ব্যবসা করতেন, এখন করেন না।
কোম্পানীগঞ্জ স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল জানান, পর্যটনের জমি উদ্ধার হলে সেখানকার পরিবেশ সুন্দর হবে। স্থলবন্দরের কাজ শেষ না হওয়ায় অনেকে সেই জমিতে পাথর মজুত করেন।