নিজস্ব প্রতিবেদক,
সিলেট থেকে এক বছরে প্রায় ২ কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে। যার বাজারমূল্য এক হাজার কোটি টাকার ওপরে। কয়েকদিনের অভিযানে লুটের মাত্র ৮ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে।
উদ্ধারকৃত পাথর প্রতিস্থাপন হলেও আগের সৌন্দর্য ফেরানো সম্ভব নয়, বলছেন পরিবেশবিদরা। পাথর লুটের ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষুব্ধ সচেতন মহল।
কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর কিংবা প্রকৃতি কন্যা জাফলং-সিলেটে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। গত কয়েকদিনের বাধাহীন পাথর লুটপাটে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। পুরোনো পাথরের স্তূপ কিংবা সারি সারি সাদা পাথরের বিছানা যেন দূরের কোনো স্মৃতি।
প্রায় এক বছর ধরে চলে পাথর লুটপাট। সম্প্রতি উদ্ধার করা কিছু পাথর প্রতিস্থাপন হলেও আগের সৌন্দর্য্য ফেরানো সম্ভব নয়, বলছেন পর্যটকরা। এক পর্যটক বলেন, ‘পাথরগুলো উদ্ধার করে আবার এবরোথেবরোভাবে ফেলছে, সেক্ষেত্রে সৌন্দর্য কতটুকু ফিরে আসবে সেটি বোঝার বিষয় আছে।’
কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থানায় দুটি মামলা হলেও সব আসামি অজ্ঞাত। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় লুটের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত থাকলেও থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মূল আসামিদের আড়ালে রেখে অভিযানে চালালে কোনো ফল আসবে না বলছেন, সচেতন মহল।
পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রেজাউল কিবরিয়া, ‘প্রশাসনের যোগসাজশ এবং নীরবতা ছাড়া এ ধরনের কাজ সম্ভব ছিল না। এটার সাথে আমাদের রাজনীতিবিদেরা জড়িত ছিলেন। আমাদের প্রভাবশালী মহলের যারা লুটেরা, শ্রেণি তারাও জড়িত ছিলেন।’
সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরার সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যারা তাদের (পাথর লুটেরা) সুবিধা দিয়েছেন, তাদের তারা ভালো করেই চেনেন। কিন্তু যেহেতু তারা তাদের কাছ থেকে নানান ধরনের সুবিধা নিয়েছেন সেকারণে এ সমস্ত মানুষকে তারা সামনে আনছেন না।’
শুধু পাথর প্রতিস্থাপন নয়, ভবিষ্যতে পাথর লুট ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপের কথা জানিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন-নবী বলেন, ‘জরিপের পরে কী করণীয়; যেভাবে জরিপের প্রতিবেদন বা সুপারিশ হবে, তারউপর ভিত্তি কের আমরা কাজ করব। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নাই’।
ভোলাগঞ্জ, সাদাপাথর, জাফলং, উৎমাছড়া, রাংপানি, বিছানাকান্দি ও লোভাছড়ায় গত এক বছরে লুট হয়েছে ২ কোটি ঘনফুটেরও বেশি পাথর। গত কয়েকদিনে অভিযানে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ৮ লাখ ঘনফুট। যা লুট হওয়া পাথরের মাত্র ৪ শতাংশ।