Wednesday, August 13, 2025
Homeসিলেট বিভাগসিলেটকাদের নেতৃত্বে সাদাপাথরে লুটপাট

কাদের নেতৃত্বে সাদাপাথরে লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক,

পাহাড় থেকে বয়ে আসা স্বচ্ছ জল আর জলে ভাসা সাদা সাদা পাথর। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদের এই উৎসমূখটির তাই নামকরণ করা হয়েছিলো সাদাপাথর। চিলো পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান। কিন্তু নজিরবিহীন লুটপাটে এখন পাথর শূন্য হয়ে পড়েছে সাদাপাথর। পাথরহীন বিরানভ’মিতে পরিণত হয়েছে এই এলাকা।

 

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তণের পর থেকেই চলছে এই লাগামহীন লুটপাট। প্রকাশ্যে প্রশাসনের সামনেই লুটে নেওয়া হয় সাদাপাথরের পাথর। এরপর প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় কিছুদিন বন্ধ ছিলো লুটপাট। তবে গত মাসের শেষ দিকে লুটপাটও আরও বেড়ে যায়। ওই সময়ে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ঢলের সাথে বিপুল পরিমাণ পাথরও নেমে আসে। এরপর থেকে হাজারও দিয়ে প্রতিদিন চলে লুটপাট। প্রতিদিন শত শত নৌকা দিয়ে লুটের পাথর নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার পর্যন্ত এই লুটপাট চলে। তবে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার কারণে মঙ্গলবার সাদাপাথরে গিয়ে পাথর তুলতে কাউকে দেখা যায়নি। যদিও গত ১৫ দিনেই একেবারে বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে সাদাপাথরকে। এই সময়ে কয়েকশত কোটি টাকার পাথর লুটে নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কেবল পাথর নয়, নদী তীরের বালিও মাটি খুঁড়েও নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময় রাতের আঁধারে মাঝেমধ্যে পাথর চুরি হলেও এখন দিনদুপুরে চুরি হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার সাদা পাথর। সাদা পাথর লুটের জন্য ওই এলাকার বাসিন্দারা প্রশাসনকেই দুষছেন। তারা বলছেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা আর মদদে এই লুটপাট চলছে।

 

লুটের নেপথ্যে কারা,

বিভিন্ন এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনের কাজ করে বারকি শ্রমিকরা। পরে তারা নদী ও আশপাশের এলাকায় মজুত করে রাখে। সেখান থেকে কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। শ্রমিকরা প্রধান ভূমিকায় থাকলেও তাদের মদদ ও আশ্রয় নেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি মামলার কারণে পাথার কোয়ারির ইজারা স্থগিত থাকে ৪ বছর। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের সব পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে।

 

বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বন্ধ থাকলেও একটি মহল সে সময় পাথর উত্তোলন করে কোনো রাখঢাক ছাড়াই। তাদের সমর্থিত লোকজনকে মাঠে নামানো হয় পাথর উত্তোলনের দাবিতে।

 

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের সুযোগে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র থেকে লুট করা হয় কয়েক কোটি টাকার পাথর। ওই দিন সন্ধ্যা থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত শত শত ছোটবড় নৌকায় করে পাথর লুট করা হয়।

 

সাদা পাথর লুটের সাথে প্রথম থেকে ওঠে এসেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের নাম। যদিও তিনি তা অস্বীকার করে আসছেন। পাথর লুটের অভিযোগে সোমবার তার পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির আরও কয়েকজন নেতা লুটপাটে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক নেতার ব্যাপারেও গুঞ্জন রয়েছে।

 

এদিকে, ৫ আগস্টের পর টানা দুই সপ্তাহ জাফলং জিরো পয়েন্ট-সংলগ্ন পিয়াইন ও গোয়াইন নদের আশপাশে জমে থাকা অন্তত এক কোটি ঘনফুট পাথর লুট করা হয়। এর আনুমানিক মূল্য শতকোটি টাকা। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ১৮ আগস্ট গোয়াইনঘাট থানায় জিডি করেন। জাফলংয়ে বালু-পাথর লুটের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা ও পরিদর্শক মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় পৃথক মামলা করেন। দুই মামলায় মোট আসামি করা হয় ১১৪ জনকে।

 

তাদের মধ্যে আছেন, সিলেট জেলা বিএনপির বহিস্কৃত যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান এবং সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন। এ ঘটনার পর তাদের বহিষ্কার করে বিএনপি। এ ছাড়া মামলার অধিকাংশ আসামিও বিএনপির নেতকর্মী।

 

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, সাদা পাথরসহ সবগুলো কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আছে। পাথর উত্তোলন বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু কোনোভাবেই লুট বন্ধ হচ্ছে না।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments