বিশেষ প্রতিনিধি,
একটা সময় ছিল, বিকেল হলেই পাড়ার মাঠে শিশুদের কোলাহলে মুখরিত হতো চারদিক। এখন সেই শব্দ হারিয়ে গেছে—শুধু বেজে চলে মোবাইলের নোটিফিকেশন। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু আমাদের সন্তানের শৈশব কি আরও জটিল হয়ে উঠছে না?
শিশুরা মোবাইলের দিকে এত ঝুঁকছে কেন?
স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বিনোদন, খেলা, পড়াশোনা—সবই এর মাধ্যমে। বাবা-মায়ের ব্যস্ততা, নিরাপত্তার ভাবনা, আর ‘শান্ত রাখার উপায়’ হিসেবে মোবাইল এখন শিশুর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিন্তু প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখা শিশুর মস্তিষ্ক ও আচরণে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে? কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য?
ভাষা ও চিন্তাশক্তির বিকাশে বিলম্ব,
মোবাইল স্ক্রিনে আসক্ত শিশুরা কম কথা বলে, কম প্রশ্ন করে। ধীরে ধীরে তাদের কল্পনা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
ঘুমের সমস্যা ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে এবং শিশু রাগী হয়ে পড়ে।
শারীরিক ক্ষতি
মোবাইল স্ক্রিনে আসক্ত শিশুদের খুব তাড়াতাড়ি চোখের সমস্যা দেখা দেয়, স্থূলতা বাড়ে, ও শারীরিকভাবে অলস হয়ে পড়ে।
অভিভাবক হিসেবে কী করণীয়?
স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করুন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও (WHO) অনুযায়ী, ৫ বছরের নিচে শিশুর জন্য দিনে ১ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম অনুচিত।
বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করুন
গল্প বলা, ছবি আঁকা, হাতে কাজ শেখানো—এই সব শিশুর মন ও মস্তিষ্ক উভয়ের জন্য উপকারী।
একসাথে সময় কাটান
শিশুরা দেখে শিখে। আপনি যদি সারাদিন ফোনে ব্যস্ত থাকেন, সেও তাই করবে। বরং একসাথে সময় কাটান।
‘ডিজিটাল ডিটক্স ডে’ চালু করুন
সপ্তাহে অন্তত ১ দিন পরিবারের সবাই মিলে মোবাইল-ফ্রি সময় কাটান।
বিশেষজ্ঞের মতে স্ক্রিনের বদলে গল্প বললে, খেলাধুলা করলে, আলাদা সময় দিলে সেই স্মৃতিই শিশুর ভবিষ্যত গড়ে দেয়।
একজন মায়ের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হলো, “আমার ছেলে আগে খুব কল্পনাশক্তি নিয়ে খেলতো। যখন মোবাইল দেওয়া শুরু করলাম, ধীরে ধীরে সে চুপচাপ হয়ে গেল। এখন আমি আবার গল্পের বইয়ে ফিরিয়েছি তাকে।”
প্রযুক্তি আমরা থামাতে পারব না, কিন্তু ব্যবহারের ধরন বদলাতে পারি। শৈশব যেন মোবাইলের স্ক্রিনে আটকে না থাকে—এই দায়িত্ব আমাদেরই। কারণ আজকের শিশুরাই তো আগামী দিনের মানুষ।