Thursday, July 17, 2025
Homeঅন্যান্যপ্রযুক্তিইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ কেন পরিবেশের জন্য হুমকি?

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ কেন পরিবেশের জন্য হুমকি?

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি,

 

বর্তমান সময়ে অনেকেই দ্রুতবর্ধনশীল গাছ লাগাতে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি এমন দুই ধরনের গাছ, যেগুলো দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি অল্প সময়েই বড় হয়। কিন্তু এই গাছদুটো আমাদের পরিবেশ ও কৃষি ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

 

পানির অপচয়, মাটির উর্বরতা হ্রাস, পাখির আবাসস্থল সংকোচনসহ জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

 

১. ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ সৃষ্টি

 

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। একটি পূর্ণবয়স্ক ইউক্যালিপটাস গাছ প্রতিদিন ২০ থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত পানি শোষণ করতে পারে। এতে আশপাশের জমি দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়, যা কৃষির জন্য বড় সমস্যা। আশপাশের মাটি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে অন্য গাছগুলো স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারে না।

 

২. জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব

 

এই গাছ দুটি এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে, যা অন্য গাছের বীজ অঙ্কুরোদগমে বাধা সৃষ্টি করে। একে বলে Allelopathy Effect। ফলে আশপাশে ঘাস, ঝোপঝাড় বা নতুন গাছ জন্মাতে পারে না।

 

৩. মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়

 

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের পাতা ও ছাল পচে গিয়ে মাটিকে অ্যাসিডিক করে তোলে। এতে মাটির pH কমে যায় এবং ফসল উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া, এই গাছের নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মাটির উপকারী জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে দেয়, ফলে জৈব পদার্থের অবক্ষয় ধীরগতিতে ঘটে।

 

৪. বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংকুচিত হয়

 

এই গাছের ঘন, খাড়া ও শক্ত কাঠ পাখিদের বাসা বাঁধার উপযুক্ত নয়। এছাড়া এর পাতা ও ছালের গন্ধ পোকামাকড়কে তাড়িয়ে দেয়, ফলে অনেক পাখির খাদ্যচক্র ভেঙে পড়ে। এর ফলে ধীরে ধীরে পাখি ও ছোট প্রাণীর সংখ্যা কমে যায়, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।

 

দ্রুতবর্ধনশীল এই গাছগুলোর পরিবর্তে দেশীয় ফলদ ও ঔষধি গাছ যেমন—নিম, কড়ই, জাম, শিশু, বহেরা, আমলকী, হরীতকী ইত্যাদি রোপণ করাই উত্তম। এসব গাছ শুধু পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, মানুষ ও প্রাণীর জন্যও সহায়ক।

 

আমাদের শুধু সৌন্দর্যের দিকে তাকালে চলবে না, আমাদেরকে পরিবেশের কথাও চিন্তা করতে হবে। আমরা যদি প্রকৃতিতে বাধা সৃষ্টি করি, তাহলে প্রকৃতিও আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বাধা দেবে। প্রকৃতি মানে শুধু গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা নয়, কোন গাছগুলো প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর এবং কোন গাছ জীববৈচিত্র্যে খারাপ প্রভাব ফেলবে সেগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে।

 

আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে,”দৃষ্টিনন্দন মানেই পরিবেশবান্ধব নয়।”

 

ইমরান হোসেন রানা।

পরিসংখ্যান বিভাগ,

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments