ধর্ম ও জীবন বিধান,
ইয়াছিন আলী খান,
বছর ঘুরে আবার এলো ত্যাগের মহিমা আর ভালোবাসার বার্তা নিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা। এ ঈদ কেবল পশু কোরবানির উৎসব নয়, বরং এটি আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য, আত্মত্যাগ ও ইমানের কঠিন পরীক্ষায়—উত্তীর্ণ হওয়ার এক অনন্য উদাহরণ। মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা, যা আমাদের আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস রাখতে এবং প্রয়োজনে নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে শেখায়।
ত্যাগের মধ্যেই ঈদুল আজহার প্রকৃত তাৎপর্য নিহিত। এই দিনে আমরা স্মরণ করি হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই সীমাহীন আত্মত্যাগের ঘটনা স্মরণ করি। যখন তিনি আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
পিতার আনুগত্য ও পুত্রের সম্মতি—এই দুই মিলেই সৃষ্টি হয়েছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ও ইমানদীপ্ত একটি অধ্যায়। আল্লাহ তাদের ত্যাগে খুশি হয়ে ইসমাইল (আ.)-এর জায়গায় একটি দুম্বা কোরবানির ব্যবস্থা করেন।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তোমরা বলো, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু—সবই আল্লাহর জন্য, যিনি সকল জগতের প্রতিপালক।— (সূরা আনআম, আয়াত : ১৬২)
এই আয়াত আমাদের শেখায়, কোরবানি শুধু একটি নিয়ম মানার বিষয় নয়, বরং আল্লাহর জন্য নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করার একটি নিদর্শন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, কিয়ামতের দিন কোরবানির পশু তার শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কোরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা
আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। অতএব, খুশি মনে কোরবানি করো।— (তিরমিজি, হাদিস: ১৪৯৩)
এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—কোরবানি শুধু বাহ্যিক কাজ নয়, এটি আন্তরিক ইবাদত। যার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
আজকের দিনে আমরা যেন কেবল পশু জবাইয়ের আনুষ্ঠানিকতায় আটকে না থাকি। বরং আমাদের অন্তর থেকেও হিংসা, অহংকার, কৃপণতা, হালাল-হারামের সীমা লঙ্ঘন—এসব ‘আত্মিক পশু’ কোরবানিও দিতে শিখি। ঈদুল আজহা আমাদের ত্যাগ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানো ও তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর পথে নিজেকে নিবেদিত করার অনুপ্রেরণা দেয়।
কোরআনে বলা হয়েছে, কোরবানির পশুর মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।— (সূরা হজ, আয়াত : ৩৭)
ঈদুল আজহার এই দিনে আমরা যেন শুধু পরিবার-পরিজনের খুশিতেই সীমাবদ্ধ না থাকি, বরং আশপাশের অসহায় মানুষের মুখেও হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি। ত্যাগ ও সহানুভূতির এই মহান দিন হোক আমাদের জীবনে আলোকবর্তিকা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবার কোরবানি কবুল করুন এবং আমাদের জীবনকে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি আর রহমতে পরিপূর্ণ করে দিন।
আসুন, আমরা সবাই ত্যাগের আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে গড়ে তুলি একটি সুন্দর, নির্ভেজাল ও মানবিক সমাজ।
ঈদ মুবারক!