Friday, May 16, 2025
Homeসিলেট বিভাগমৌলভীবাজারমৌলভীবাজারে চড়ই পাখির কলকাকলিতে পথচারীদের প্রানবন্ত করে তুলছে

মৌলভীবাজারে চড়ই পাখির কলকাকলিতে পথচারীদের প্রানবন্ত করে তুলছে

 

পিন্টু দেবনাথ :

 

পর্যটন সমৃদ্ধময় মৌলভীবাজার জেলা। এ জেলায় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সকল প্রকৃতি প্রমিদের আকর্ষণ করছে। তেমনি এক বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির এক জীবন্ত ছোট ছোএ চড়ই পাখিদের কলকাকনিতে পথচারিদের প্রাণবন্ত করে তুলছে।

মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ এলাকায় প্রতিদিন সকাল ও বিকেলবেলা এক অনন্য দৃশ্যের সাক্ষী হন এলাকাবাসী। অসংখ্য চড়ুই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আশেপাশের গাছে, বৈদ্যুতিক তারে এবং ঘরের কার্নিশে প্রতিদিনই শত শত চড়ুই পাখি ভিড় করে। এ দৃশ্য এখন অনেকের কাছেই দৈনন্দিন জীবনের এক শান্তির মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কবি ও লেখক স’লিপক বলেন, ব্যস্ততম শহরের কোলাহলের মাঝে এই পাখিগুলোর ডাক প্রাকৃতিক এক স্বস্তির বার্তা দেয়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটি একটি বাস্তব জীববৈচিত্র্যের পাঠ।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, এ ধরনের পাখির সংখ্যা দেশের অনেক এলাকায় কমে এলেও কুসুমবাগ এলাকায় চড়ুইদের এমন জড়ো হওয়া একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত। তারা মনে করেন, এটি স্থানীয় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নাগরিক সচেতনতারও ফলাফল।

এদিকে পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল চৌমুহনীতে

চড়ুই পাখির কলতানে মুখরিত। নজর কাড়ছে পথচারীদের।

গতকাল শুক্রবার পড়ন্ত বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন বিকেল হলেই হবিগঞ্জ রোড, মৌলভীবাজার রোড, স্টেশন রোড ও কলেজ রোডের প্রারম্ভ প্রান্তে অবস্থিত বৈদ্যুতিক খুটি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তারের মাঝে হাজার-হাজার চড়ুই পাখি।

ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা চড়ুই পাখির কিচির মিচির শব্দ, দল বেঁধে তারে বসা, ফুড়–ৎ ফুড়–ৎ আসা-যাওয়া, এক তার থেকে আরেক তারে উড়াউড়ি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এলাকার মানুষের মাঝে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর মনোরম কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

শ্রীমঙ্গল শহরের মক্কা মার্কেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুমন দাশ বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশেই চড়ই পাখির আনাগোনা। বিশেষ করে পড়ন্ত বিকেলে পাখির ঝাঁক আর কিচিরমিচির শব্দ খুবই ভালো লাগে।

সারারাত ধরে চলে চৌমুহনী এলাকায় তাদের বিচরণ থাকে।

পরিবেশ কর্মী মো. মোনায়েম খান বলেন, চৌমুহনার ওই কারেন্টের তারে কয়েকটি পাখি বসা শুরু করে। ধীরে ধীরে এখানে পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে।

কোন মানুষ এসব পাখিদের কোন ক্ষতি করেন না। এখন এখানে হাজারো পাখির মেলা। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মন ভরে যায়। মূল শহরে এ ধরণের পাখিদের বসবাস বর্তমান সময়ে বিরল।

শিক্ষার্থী প্রান্ত দেবনাথ জানান, বিকেলে যখন কোচিং করে আসি তখন চড়ই পাখির ডাক শুনে কিছু সময় অবস্থান করি। তাদের উড়াউড়ি আর ডাকাডাকিতে মন ভরে যায়।

 

কী নির্মল আনন্দ। এ আনন্দ, এ কোলাহল পাখিপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। মুহূর্তের জন্যেও হলেও মনটা ভরে ওঠে প্রশান্তিতে। এখানে কেউ পাখি শিকার বা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে পারে না। বিদ্যুতের তারে তারে গায়ে গায়ে বসে থাকে অগণিত চড়ুই পাখি। যানবাহনের অস্বাভাবিক শব্দও সয়ে গেছে তারা।

 

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সূত্র মতে, শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা এলাকায় আবাস গড়ে তোলা পাখিকে পাতি চড়ুই পাখি বলা হয়। এ প্রজাতির পাখির বৈজ্ঞানিক নাম প্যাসারিডি। যার অর্থ গৃহবাসী চড়ুই। এ ধরণের চড়–ই পাখি সাধারণত দৈর্ঘ্যে ১৬ সেমি (৬ দশমিক ৩ ইঞ্চি) এবং ওজন ২৪ থেকে ৩৯ দশমিক ৫ গ্রাম হয়ে থাকে। এদের প্রধান খাবার বীজ ও শস্যদানা। মানববসতির আশেপাশে সহসাই পাতি চড়ুইয়ের দেখা পাওয়া যায়। প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা এ প্রজাতির পাখির। তবে সাধারণত জনহীন বনভূমি ও মরুভূমিতে এরা বসবাস করে না।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, চড়ুই পাখি আমাদের অত্যন্ত নিকটতম বা প্রতিবেশী পাখি। গ্রাম-গঞ্জে অত্যন্ত ছোটবেলা থেকে যে পাখির ডাক শুনে আমরা বড় হয়েছি সে পাখি হলো চড়ুই। এ পাখিটি আমাদের পারিবারিক খাবার ও শস্য খেয়ে থাকে। প্রকৃতির প্রয়োজনে আমাদের উচিত পাতি চড়ুইয়ের যত্ন নেয়া।

তবে চড়ুইদের নিরাপদ আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এলাকাবাসী ও পৌর কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments