ধর্ম ও জীবন বিধান ::
ইতেকাফ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এক বিশেষ আমল। ইতেকাফের বিধান অনেক প্রাচীন। ইতেকাফ আরবি শব্দ। এর অর্থ অবস্থান করা, নিজেকে কোনো স্থানে আবদ্ধ করে রাখা।
শরিয়তের পরিভাষায় কতগুলো বিশেষ শর্তসাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। যেখানে জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে সেই সব লোকের জন্য পবিত্র করো, যারা (এখানে) তাওয়াফ করবে, ইতেকাফ করবে এবং রুকু-সেজদা করবে।’ (সুরা বাকারা: ১২৫)
ইতেকাফ তিন প্রকার। ১. ওয়াজিব, ২. সুন্নত ও ৩. নফল।
ওয়াজিব ইতেকাফ হলো মান্নতকৃত ইতেকাফ এবং সুন্নত ইতেকাফ ভেঙে গেলে তার কাজা। যত দিনের মান্নত করা হবে বা যত দিন সুন্নত ইতেকাফের ঘাটতি রয়েছে, তত দিন এই ইতেকাফ করা আবশ্যক। এই ইতেকাফ না করলে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে।
আর সুন্নত ইতেকাফ তথা রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ মসজিদে করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ এলাকা বা মহল্লার মসজিদে কেউ ইতেকাফে না বসলে মহল্লার সবাই গুনাহগার হবেন। একজনও যদি ইতেকাফে বসেন, তাহলে পুরো এলাকার সবাই সুন্নত বাদ দেওয়ার গুনাহ থেকে বেঁচে যাবেন।
তবে কাউকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতেকাফ করালে তা সহিহ হবে না। এ জাতীয় এতেকাফ দ্বারা এলাকাবাসী দায়িত্বমুক্ত হতে পারবে না। (হেদায়া, ফাতহুল কাদির: ২/৩০৪; রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪২; খুলাসাতুল ফতোয়া ১/২৬৭; ইলাউস সুনান: ১৬/১৭২-৭৩; রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৫)
রমজানের ইতেকাফকে অনেকে ফরজে কেফায়া মনে করে থাকেন। আসলে রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ ফরজ নয়, বরং তা সুন্নত। ইবনুল মুনজির বলেন, ‘আলেমরা ইজমা করেছেন যে ইতেকাফ সুন্নত; ফরজ নয়। তবে কেউ যদি মানত করে নিজের ওপর ওয়াজিব করে নেয়, তাহলে তা ওয়াজিব হয়।’ (আল-ইজমা, পৃষ্ঠা-৫৩)
আর নফল ইতিকাফ হলো রমজানের শেষ দশকে ১০ দিনের কম ইতেকাফ করা অথবা বছরের অন্য যেকোনো সময় যতক্ষণ ইচ্ছা, ততক্ষণ ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এই ইতেকাফের অনেক সওয়াব, কিন্তু না করলে গুনাহ নেই।
ইতেকাফের ফজিলত নিয়ে এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, هُوَ يَعْكِفُ الذُّنُوبَ ، وَيُجْرَى لَهُ مِنْ الْحَسَنَاتِ كَعَامِلِ الْحَسَنَاتِ كُلِّهَا ‘ইতেকাফকারী গুনাহকে প্রতিরোধ করেন। ইতেকাফকারীকে সব নেক আমলকারীর মতো নেকি দেওয়া হবে।’ (ইবন মাজাহ: ১৭৮১)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, مَنِ اعْتَكَفَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ جَعَلَ اللَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ ثَلاثَ خَنَادِقَ ، كُلُّ خَنْدَقٍ أَبَعْدُ مِمَّا بَيْنَ الْخافِقَيْنِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতেকাফ করে, আল্লাহ তার ও জাহান্নামের আগুনের মাঝে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন; যা পূর্ব-পশ্চিমের চেয়েও বেশি দূরত্ব। (তাবারানি: ৭৪২০; হাকিম: ৪/২৬৯; বায়হাকি: ৩/৪২৪)
ইতেকাফ বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতার অনন্য মাধ্যম। ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায় এই ইতেকাফ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এই মহান ইবাদতে যতটা সম্ভব শরিক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।