ধর্ম ও জীবন বিধান ::
রমজানে রোজা রাখা প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো (সূরা বাকারা: ১৮৩)।
অন্যদিকে রমজান মাসের রোজা রাখার মধ্যদিয়ে পরকালে জান্নাত লাভেরও সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, এক মরুবাসী সাহাবী রাসুল (সা.) এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন- আমাকে এমন আমলের পথনির্দেশ করুন, যা আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। জবাবে নবীজি তাকে বললেন- তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনোকিছু শরিক করবে না, (পাঁচ ওয়াক্ত) ফরজ সালাত (নামাজ) আদায় করবে, ফরজ যাকাত আদায় করবে ও রমজানের সাওম (রোজা) পালন করবে।
পরে ওই সাহাবী বললেন, আমার প্রাণ যার হাতে তাঁর কসম, আমি এর উপর বৃদ্ধি (এর বেশি আমল) করব না। এরপর তিনি যখন ফিরে গেলেন তখন রাসুল (সা.) বললেন- কেউ যদি জান্নাতি লোক দেখতে আগ্রহী হয়, সে যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩১৫)
এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বর্ণনায় বিশুদ্ধ ও ত্রুটিমুক্তভাবে সাওম বা রোজা পালনের কথাও এসেছে। তবে প্রশ্ন হলো- পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে পারফিউম বা সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে কিনা?
খোদ রাসুলুল্লাহ (সা.) আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। হযরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘চারটি বস্তু সব নবীর সুন্নত- আতর, বিয়ে, মিসওয়াক ও লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২২৪৭৮)। এ ক্ষেত্রে আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির ফতোয়াসামগ্রী- ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা’য় বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি রমজানে দিনের বেলায় রোজা অবস্থায় কোনো প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করেছে, তার রোজা নষ্ট হয়নি।
তবে উদ্ভিদজাতীয় বস্তু থেকে ঘ্রাণ নেয়া ও গুঁড়া সুগন্ধি যেমন- গুঁড়া মিশক থেকে ঘ্রাণ নেয়া যাবে না। কারণ, ঘ্রাণ নেয়ার সময় এগুলো নাকের মাধ্যমে পেটে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১০/২৭১
এ ক্ষেত্রে আতর ব্যবহার সুন্নত হলেও পারফিউমের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন। কারণ, অনেক পারফিউমে অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়। এজন্য পারফিউম ব্যবহারের আগে সেটিতে অ্যালকোহল আছে কিনা তা জানতে হবে। তবে পারফিউম যদি অ্যালকোহলমুক্ত হয় তবে এটি ব্যবহার করা জায়েজ।
মনে রাখতে হবে, অন্য যেকোনো সময়ের মতো সিয়াম সাধনার মাসেও আতর বা পারফিউম ব্যবহার করা যাবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আতর ও পারফিউমে ধোঁয়া ওঠার মতো কিছু যেন না থাকে বা এমন কিছুর ব্যবহার যেন না থাকে, যা পেটে প্রবেশের সুযোগ থাকে। অন্যথায় রোজা ভেঙে যাবে।