Wednesday, March 12, 2025
Homeইসলামজাকাত হিসাব করার সহজ ও সঠিক পদ্ধতি

জাকাত হিসাব করার সহজ ও সঠিক পদ্ধতি

ধর্ম ও জীবন বিধান::

 

রমজান মাসে জাকাত প্রদান করা অত্যন্ত উত্তম। বছরের যেকোনো একটি দিনকে নির্ধারণ করে জাকাতযোগ্য সম্পদের হিসাব করতে হবে এবং সে অনুযায়ী জাকাত প্রদান করতে হবে।

 

জাকাত জেনেবুঝে, হিসাব করে আদায় করতে হয়। হিসাব-নিকাশ ছাড়া অনুমানের ওপর ভিত্তি করে জাকাত প্রদান করলে তা পরিপূর্ণরূপে আদায় হবে না। হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমার হিসাব নেওয়ার আগে নিজের হিসাব নিজে করে রাখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

 

কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তাআলা বলবেন: ‘তোমার হিসাব-কিতাব পাঠ করো; আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।’ (আল কোরআন, সুরা-১৭ [৫০] আল ইসরা-বনি ইসরাইল (মাক্কি), রুকু: ২/২, আয়াত: ১৪, মঞ্জিল: ৪, পারা: ১৫ সুবহানাল্লাজি, পৃষ্ঠা ২৮৪/২)।

 

জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদ কমপক্ষে এক চান্দ্র বছর (৩৫৪ দিন) ধারাবাহিকভাবে থাকতে হবে। তবে সম্পদের পুরো বছর অতিক্রান্ত হওয়া আবশ্যক নয়।

 

সম্পদের নিসাব হলো-

সোনা: ৭.৫ ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম)

 

রুপা: ৫২.৫ ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম)

 

নগদ টাকা বা ব্যবসার পণ্য: উভয়ের মধ্যে যেকোনো একটির মূল্যের সমপরিমাণ।

 

নিম্নলিখিত সম্পদগুলোও জাকাতযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে—

বিনিময়যোগ্য সম্পদ: বৈদেশিক মুদ্রা, ট্রাভেলার্স চেক, ব্যাংক চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার, মানি অর্ডার, শেয়ার সার্টিফিকেট, কোম্পানি শেয়ার, ডিও লেটার, সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদি।

 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক আমানত: সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, মেয়াদি সঞ্চয়, কিস্তিতে জমাকৃত অর্থ, এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট), পোস্টাল সঞ্চয়ী, বিশেষ সঞ্চয়, পেনশন স্কিম, প্রভিডেন্ট ফান্ড (সরকারি বা স্বেচ্ছা), ডিভিডেন্ড—যা নগদায়ন করলে প্রাপ্ত অর্থ।

 

ঋণ ও মূল্যবান সামগ্রী: ফেরতযোগ্য ঋণ, ব্যবসার পণ্য, মূল্যবান শোপিস, হীরা-জহরত, মুক্তা, মণি-মাণিক্য—এসবের বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করতে হবে।

 

ব্যবসায়িক ও কৃষিভিত্তিক সম্পদ: নার্সারি, হর্টিকালচার, বীজ উৎপাদন খামার, কৃষি খামার, বনজ বৃক্ষ খামার, ফলদ ও ঔষধি গাছের খামার, চা-বাগান, রাবার বাগান, তুলা ও রেশম খামার, আগরগাছের বাগান, অর্কিড নার্সারি, ফুল বাগান, মুরগির খামার, মাছের খামার ইত্যাদি।

 

অতিরিক্ত সম্পদ: ব্যক্তিগত প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে কোনো সামগ্রীও জাকাতের আওতায় পড়বে। এসবের হিসাব বর্তমান বাজারদরে নির্ধারণ করতে হবে।

 

যেদিন অর্থসম্পদ নিসাব পরিমাণে পৌঁছাবে, সেদিন থেকেই জাকাত বর্ষের গণনা শুরু হবে।

 

জাকাতযোগ্য সম্পদের ‘রুবউ উশর’, অর্থাৎ ২.৫% (শতকরা আড়াই ভাগ, ৪০ ভাগের ১ ভাগ) জাকাত প্রদান করতে হবে। জাকাত চান্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী আদায় করতে হয়।

 

চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে হয়, যেহেতু সৌরবর্ষ ৩৬৫ দিনে বা ৩৬৬ দিনে হয়, তাই সৌরবর্ষ অপেক্ষা চান্দ্রবর্ষ ১১ বা ১২ দিন কম। সৌরবর্ষ হিসাবে জাকাত আদায় করতে চাইলে শতকরা ২.৫%-এর (আড়াই ভাগ) পরিবর্তে (২.৫% ভাগ ৩৫৪ x ৩৬৫) ২.৫৭৮% (বা ২.৫৮% প্রায়) দিতে হবে। অথবা মূল জাকাতের সঙ্গে অতিরিক্ত ১১ দিনের হিসাব যোগ করতে হবে, যথা ২.৫% ভাগ ৩৫৪ x ১১)। (জাকাত নির্দেশিকা, পৃষ্ঠা ১৬)।

 

জাকাতের পরিমাণ হলো প্রতি ৪০ টাকায় ১ টাকা বা ৪০ ভাগের ১ ভাগ। ১০০ টাকায় আড়াই টাকা বা শতকরা আড়াই শতাংশ। এক হাজার টাকায় পঁচিশ টাকা। এক লাখ টাকায় আড়াই হাজার টাকা। এক কোটি টাকায় আড়াই লাখ টাকা। এক শ কোটি টাকায় আড়াই কোটি টাকা। এক হাজার কোটি টাকায় পঁচিশ কোটি টাকা। এক মিলিয়নে পঁচিশ হাজার, এক বিলিয়নে পঁচিশ কোটি; এক ট্রিলিয়নে আড়াই হাজার বা পঁচিশ শত কোটি)।

 

যদি কারও জাকাত সমাপনী হিসাবের তারিখ রমজানে না হয়, তবে তিনি অতিরিক্ত সময়ের হিসাব সমন্বয় করে রমজানে জাকাত প্রদান করতে পারেন।

 

সোনা, রুপা, নগদ টাকা এবং ব্যবসার পণ্য—এই তিন খাতে জাকাত বর্ষপূর্তি বা জাকাত হিসাব সমাপনী দিনে যত সম্পদ থাকবে, তার পুরো হিসাব করেই জাকাত দিতে হবে। বছরের যেকোনো সময়ে সম্পদ অর্জিত হলে, বছর শেষে তা জাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রতি বছর নির্দিষ্ট দিনে ও সময়ে জাকাতের হিসাব করতে হবে, যেমন ১ রমজান সন্ধ্যা ৬টা। এই সময়ের এক সেকেন্ড আগেই যে সম্পদ আসবে, তা জাকাতযোগ্য হবে, আর এক সেকেন্ড পরের সম্পদ পরবর্তী বছরের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবে।

 

স্থাবর সম্পত্তি যেমন জায়গা, বাড়ি ও গাড়ি, যা বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা হয়নি, তা জাকাতের আওতায় আসবে না। তবে বিক্রির জন্য রাখা গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট বা জমির বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করে প্রতি বছর (যদি তা বিদ্যমান থাকে) জাকাত দিতে হবে।

 

যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসা ও কোম্পানির ক্ষেত্রে, মালিকদের পৃথক সম্পদের হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। কোনো ব্যক্তি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন বা তার অন্যান্য সম্পদসহ নিসাব পরিমাণ হয়ে যায়, তবে তিনি জাকাত দিতে বাধ্য হবেন। তবে যদি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে জাকাত প্রদান করে, তাহলে পৃথকভাবে মালিকদের আবার জাকাত দিতে হবে না, তবে এর জন্য অংশীদারদের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন।

 

যদি কোনো অংশীদারের সম্পদ নিসাব পরিমাণ না হয় বা অন্যান্য সম্পদ মিলিয়েও নিসাব পরিমাণ না হয়, তবে তাকে জাকাত প্রদান করতে বাধ্য করা যাবে না, বরং তিনি নিজেই জাকাত গ্রহণের যোগ্য হতে পারেন। মালিকেরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলেও, তাদের জাকাত বর্ষের শুরু ও শেষ সময় একই নাও হতে পারে।

 

জাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে:

তাৎক্ষণিক পরিশোধযোগ্য ঋণ,

কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ঋণের চলমান কিস্তির পরিমাণ,

তবে কোনো ব্যবসায়ী যদি সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন এবং তার সম্পদের তুলনায় ঋণের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলেও তার ঋণ জাকাত হিসাবের ক্ষেত্রে বিবেচিত হবে না। বরং তার সোনা, রুপা, নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্যের ওপর জাকাত প্রদান করতে হবে। কারণ, যদি ঋণ বাদ দিয়ে সম্পদের হিসাব করা হয়, তবে তিনি নিজেই জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতে পারেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments