স্পোর্টস ডেস্ক::
সমুদ্রের পারে একটু হাঁটাহাঁটি করার সময় অচেনা এক লোক দৃষ্টি আকর্ষণ করায় থামতে হলো। পর্যটক ভেবেই এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় এক হোটেলের এই কর্মী। দ্রুত পরিচয় পর্ব সেরে নিয়েই তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘আপনারা কি জানেন যে কলম্বোয় আজ বিশেষ একটি দিন?’
রত্নদ্বীপে রত্নতুল্য জয়ের আশায়পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য শ্রীলঙ্কায় মাঝেমধ্যেই সরকারি উদ্যোগে এ রকম বিশেষ দিন আসে। যেদিন সরকারি নাম্বার প্লেটযুক্ত তিন চাকার টুকটুক বিনা ভাড়ায় তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে নিয়ে যায়।
সরকারি ‘জেম ব্যুরো’ অনুমোদিত রত্নের দোকান থেকে শতকরা ৫০ শতাংশ ছাড়ে অমূল্য পাথর কেনা হয়ে গেলে আবার পৌঁছে দিয়ে যায় হোটেলেও। এ রকম দিনে ব্লু টোপাজ, রুবি, স্যাফায়ার ও পেরিডটের সঙ্গে নাম না জানা আরো অনেক মূল্যবান পাথরের গয়না কেনার জন্য পর্যটকদের ঢল নামে রত্নের জন্য বিখ্যাত দ্বীপরাষ্ট্রের রাজধানীতে।
পর্যটকদের জন্য এ রকম দোকান একাধিক। তবে সময় এমন এক সন্ধিক্ষণে এনে দাঁড় করিয়েছে যে বাংলাদেশ দলের জন্য একই রকম রত্ন তুলে নেওয়ার জায়গা এখন একটিই।
সেটি কলম্বোর খেত্তারামা এলাকার প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম। যেখানে এশিয়া কাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে আজ তারা মুখোমুখি শ্রীলঙ্কার। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ক্যান্ডিতে তাদের বিপক্ষে ব্যাটিং ভরাডুবি হারের পথই দেখায়নি শুধু, আসর থেকে বিদায়ের শঙ্কাও জাগিয়েছিল। লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিপুল ব্যবধানের জয়ে সব সংশয় উড়ে গেলেও সাকিব আল হাসানদের পারফরম্যান্সের ওঠানামা অব্যাহত।
আফগানদের বিপক্ষে ৩৩৪ রান করার আগে-পরে শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ১৬৪, সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৩! গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারলেও যেখানে ২৬০-৭০ রান অবলীলায় হয়ে যেতে পারত বলে মনে করে তারা নিজেরাই, সেখানে আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতায় আবার খাদের কিনারে। যতটুকু ওঠা, ঠিক ততটুকুই নামা। তাই আবার টিকে থাকার সংগ্রাম। তাতেই রত্নদ্বীপে আজকের ম্যাচ জেতাটা হয়ে উঠেছে রত্নতুল্যই। পর্যটকদের মতো অর্ধেক ছাড়ে যেটি পাওয়ার কোনো বন্দোবস্ত নেই সাকিবদের।
১৫ সেপ্টেম্বরের ভারত ম্যাচটি যাতে কেবলই আনুষ্ঠানিকতার না হয়ে যায় এবং তত দিন পর্যন্ত ফাইনালে যাওয়ার আশাও যেন সজীব থাকে, সে জন্য নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়া লগ্নও এসে উপস্থিত।
কিন্তু সমস্যা হলো যে দুই ম্যাচে ব্যাটিং ভেঙে পড়েছিল, দুটোতেই প্রতিপক্ষ খেলেছে তাদের হোম কন্ডিশনে। লাহোরে হারার পর এটিকেও বড় একটি সমস্যা বলে উল্লেখ করেছিলেন সহকারী কোচ নিক পোথাস। যদিও ভিন্ন দাবিই করলেন চন্দিকা হাতুরাসিংহে। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে কাল সন্ধ্যার অনুশীলনের আগে জাতীয় দলের হেড কোচ বলছিলেন, ‘প্রতিপক্ষের কন্ডিশনে খেলাটা খুব বড় কোনো সমস্যা বলে আমার মনে হয় না। এটি ঠিক যে দুই দেশে একদম ভিন্ন কন্ডিশনে আমরা খেলেছি। দেশের বাইরে খেলতে এলে এ রকম চ্যালেঞ্জ আসবেই। আমাদের তা সামলেও নিতে হবে।’
নিজেদের মাঠে লঙ্কানরা কতটা শক্ত প্রতিপক্ষ, সেটি বাংলাদেশ শিবিরের আলোচনায় কান পাতলেও কিছুটা আঁচ করা যায়। অ্যানালিস্টের ভুলে সুপার ফোরের স্বপ্ন বিসর্জন দেওয়া আফগানিস্তানকে এখানে সুপার ফোরের প্রতিপক্ষ হিসেবে পেলে যে কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যেতে পারত, তা নিয়েও সাকিবদের আফসোস চাপা নেই। আবার সামনে এখন যে শ্রীলঙ্কা, তারাও টানা ১২টি ওয়ানডে জিতে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে। হাতুরাসিংহে অবশ্য মনে করিয়ে দিলেন যে এর কয়েকটি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে সহযোগী সদস্য দেশের বিপক্ষেও। সেই সঙ্গে বলতে ভুললেন না যে এতগুলো ম্যাচ টানা জেতা সহজও নয়। আর গ্রুপের ম্যাচে হারার পর লঙ্কানদের সামর্থ্যকে খাটো করার সুযোগও নেই।
আর নিজেই যখন বলছেন যে লাহোর থেকে এসে এখানে একদম ভিন্ন কন্ডিশন দেখছেন, তখন স্বাগতিকদের বিপক্ষে নামার আগে বাড়তি সতর্কতাও আছে। মাঠে এসেই উইকেট দেখেছেন। দেখে এই শ্রীলঙ্কান নিশ্চিত যে, ‘আমার মনে হয়, দুই দলই ভিন্ন কম্বিনেশন নামানোর কথা ভাবছে। আমরা তো ভাবছিই।’
তবে সংবাদ সম্মেলনে ঢোকার সময় শ্রীলঙ্কা দলের কোচ ক্রিস সিলভারউডকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এসেছেন। তাই একচোট রসিকতাও করলেন, সেই সঙ্গে একাদশ সাজানোর সিদ্ধান্তটি আরো পরের জন্যও তুলে রাখলেন, ‘এখানে তো শ্রীলঙ্কার কোচকেও দেখলাম (হাসি…)। আসলে কন্ডিশন কাল আরেকবার দেখব। এত আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে চাই না।’
সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হওয়ার কারণ কলম্বোর আবহাওয়া। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির পর গতকাল রোদের হাসি দেখা গেছে। এত দিন ধরে ঢাকা থাকার পর উইকেটের কাভারও সরানো হয়েছে এদিনই। এসব ক্ষেত্রে উইকেট একটু বেশিই স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ম্যাচের আগে আজকের আবহাওয়ার গতিবিধি দেখে নেওয়ার অপেক্ষার কথাও বললেন হাতুরাসিংহে, ‘আবহাওয়ার কারণে আজ পিচের কন্ডিশন যা দেখেছেন, কাল সেটি বদলেও যেতে পারে। যত দেরিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তত ভালো। আমি এই মাঠের উইকেট খুব ভালো চিনি। ২৪ ঘণ্টায় এটির রূপ বদলাতেও পারে। আসলে সব কিছুই নির্ভর করছে উইকেট কতটা সূর্যালোক পাচ্ছে, তার ওপর।’
সেই সঙ্গে আছে দলের পারফরম্যান্সের রোদ-বৃষ্টি নিয়ে ভাবনাও। আজকের ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার ক্ষেত্রে হাতুরাসিংহে সবচেয়ে বেশি জোর দিলেন এই জায়গাটিতেই, ‘অধারাবাহিকতার ব্যাপারটিই দূর করতে হবে। আমরা এটি নিয়ে কথাও বলেছি। আশা করছি, দারুণ এক পারফরম্যান্সই দেখবেন।’
তা দেখাতে পারলেই কেবল ধরা দেবে রত্নতুল্য জয়।