গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ঝুঁকি যাঁদের, করণীয়
স্বাস্থ্যসেবা ডেস্ক :
গর্ভকালীন বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস একটি বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস, যেটা সর্বপ্রথম গর্ভাবস্থায় শনাক্ত হয়, তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়। এ সময়ে শর্করা বিপাকে সমস্যার কারণে এই ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ বছর পরে এসব মায়ের পূর্ণকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে। সাধারণত গর্ভকালীন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে শনাক্ত হয়ে থাকে।
ফ্যাটি লিভার, হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হতে পারে।
ঝুঁকিতে কারা
* যাঁদের বংশগত হিস্ট্রি রয়েছে
* ওজন যাঁদের বেশি
* ত্রিশের ওপরে বয়স
* এশিয়ান, প্যাসিফিক আইল্যান্ডে যাঁদের বসবাস
* আগে গর্ভপাতের বা এবোরশনের হিস্ট্রি যাঁদের আছে
* যাঁদের পিসিওএস রয়েছে
গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে।
গর্ভের শিশুর যেসব সমস্যা হতে পারে
* স্নায়ু টিউবের ত্রুটি
* মাথার খুলির অনুপস্থিতি
* মাথা ছোট হওয়া
* হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র হওয়া
* কিডনিতে পানি জমা
* মেরুদণ্ডের হাড়ের সমস্যা
* ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সমস্যা
* নাড়িতে সমস্যা
মায়ের যেসব সমস্যা হতে পারে
* গর্ভপাত
* গর্ভকালীন প্রেশারের ঝুঁকি
* ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
* হৃদযন্ত্রের শিরার সমস্যা
* ইনফেকশন
* জরায়ুতে পানির পরিমাণ বেশি থাকা
করণীয়
যাঁরা ঝুঁকিতে আছেন তাঁদের গর্ভের আগে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে। ফলে সুস্থ অবস্থায় গর্ভধারণ করা সম্ভব হবে।
ডায়াবেটিস আছে কি না, তা ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট বা ওজিটিটি করে জানা যায়। এভাবে প্রি-প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস ইনসুলিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে তারপর বাচ্চা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
ডায়েট : খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শে সুষম খাবার খাওয়া, যা কি না মা এবং বাচ্চা উভয়কে সুস্থ রাখবে।
ব্যায়াম : শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে হালকা ব্যায়াম, হাঁটাচলা করতে হবে।
ওষুধ : ইনসুলিন, মেটফরমিন। গ্লুকোমিটার বাসায় রাখতে হবে এবং নিয়মিত ব্লাড সুগার চেক করাতে হবে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
* নিয়মিত রক্তের সুগার পরীক্ষা করা
* তিন মাস পর পর এইচবিএ১সি পরীক্ষা করা
* ১৩ বা ১৪ সপ্তাহে এনটি স্ক্যান করা
* ২০ থেকে ২২ সপ্তাহে অ্যানোমালি স্ক্যান করা
* গর্ভকালীন রুটিন চেকআপ করা
* লিভার এবং কিডনির জন্য রুটিন পরীক্ষা করা
ডেলিভারি : ডায়াবেটিস খুব ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকলে এবং বাচ্চার কন্ডিশন স্বাভাবিক থাকলে চিকিৎসক নরমাল ডেলিভারির পরামর্শ দিতে পারেন।
ডেলিভারি-পরবর্তী চিকিৎসা
* মায়ের শরীরের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
* শিশুকে খুব ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন শিশু বিশেষজ্ঞ
* শিশু এবং মা দুজনের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে
* ডেলিভারির ৪৫ দিন পর আবার ওজিটিটি পরীক্ষার মাধ্যমে মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রয়ে গেছে কি না, পরীক্ষা করতে হবে।