Friday, November 8, 2024
Homeইসলামজুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াতের যত ফজিলত

জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াতের যত ফজিলত

জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠের যত ফজিলত

ইসলামী জীবন ডেস্ক:

সুরা কাহফ পবিত্র কোরআনের ১৮ নং সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরায় ১১০টি আয়াত রয়েছে। সুরা কাহফে বর্ণিত তিনটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথম পর্যায়ে সাত যুবকের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে; যারা ঈমান রক্ষার জন্য নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে দূরবর্তী কোনো পাহাড়ের গুহায় গিয়ে আত্মগোপন করে এবং সেখানে ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়।

 

দ্বিতীয় পর্যায়ে মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে দুনিয়ার ক্ষমতাবান বাদশাহ জুলকারনাইনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তিনি সারাবিশ্ব শাসন করেছেন এবং পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন। হাদিসে এই সুরা পাঠের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

 

বিশেষত জুমার দিন তা তিলাওয়াতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

নিম্নে এই সুরা পাঠের কয়েকটি বিশেষত্ব তুলে ধরা হলো-

আল্লাহর রহমত বর্ষণ : হাদিসের বর্ণনা অনুসারে সুরা কাহফ তিলাওয়াতের অন্যতম ফজিলত হলো, তা পাঠ করলে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত অবতীর্ণ হয়। বারা বিন আজিব (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি (নামাজে) সুরা কাহফ তিলাওয়াত করছিল। তখন বাড়ির একটি চতুষ্পদ জন্তু লাফাতে শুরু করে।

 

অতঃপর সে সালাম বলল। তখন কুয়াশা বা একখণ্ড মেঘ তাকে আবৃত রাখে। বারা বিন আজিব (রা.) বর্ণনা করেছেন যে সে বিষয়টি রাসুল (সা.)-এর কাছে বর্ণনা করেন। তিনি তাঁকে বলেন, ‘হে অমুক, তুমি সুরাটি তিলাওয়াত করো। কারণ এটি আল্লাহর রহমত বা প্রশান্তি, যা কোরআন তিলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল।

’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬১৪; মুসলিম, হাদিস : ৭৯৫)

আকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত আলোকিত : বিশেষ করে জুমার দিন এই সুরা তিলাওয়াতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসের বর্ণনা অনুসারে জুমাবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতর দিন। সুরা কাহফ তিলাওয়াত এই দিনের অন্যতম আমল। মুআজ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের শুরু ও শেষ তিলাওয়াত করবে তার পায়ের নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে। আর যে ব্যক্তি পুরো সুরা তিলাওয়াত করবে তার জন্য আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪৩৯/৩)।

জুমার নামাজে বিশেষ সওয়াব : সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)।

পুরো সপ্তাহের গুনাহ মাফ : কিয়ামতের দিন এই সুরা তার পাঠকারীকে আলোকিত করবে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পড়বে, তার পায়ের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত নুর প্রজ্জ্বলিত হবে এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য উজ্জ্বল হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৬/৩৯৮)।

সপ্তাহ ব্যাপী নুর হয়ে থাকবে : কেউ প্রতি জুমায় এই সুরা তিলাওয়াত করলে এক জুমা থেকে অন্য জুমার মধ্যবর্তী সময় তার জন্য নুর প্রজ্জ্বলিত করে রাখা হয়। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে।’ (সুনানে দারিমি, হাদিস : ৩৪০৭)।

সুরা কাহাফ পাঠে দাজ্জাল থেকে সুরক্ষা : এই সুরা পাঠ করার মাধ্যমে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮০৯)।

যেসব আয়াত পাঠে রয়েছে বিশেষ মর্যাদা : হাদিসে বর্ণিত আয়াতগুলো অর্থাৎ শুরুর ১০টি বা শেষের ১০টি আয়াত পড়া যেতে পারে। পারলে পুরো সুরা মুখস্থ করা উত্তম। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের শেষ ১০ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ, ৪৪৬/৬)।

আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের ১০ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৮৬)।

মহান আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments