নিজস্ব প্রতিবেদক,
শ্রীমঙ্গলের পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ চা বাগান,
সবুজ প্রকৃতির নির্জনতায় ভরপুর পাহাড়, টিলা, চা বাগান উপভোগ করতে শ্রীমঙ্গলের বিকল্প নেই। আর চান্দের গাড়ি হলে তো কথাই নেই। মাঝেমধ্যে ভ্রমণ করা খুবই জরুরি। কারণ বেশি দিন একই জায়গায় অবস্থান করলে একঘেয়েমিতা আসতে পারে। চোখজুড়ানো আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ যত পাড়ি দেবেন মনের মধ্যে জমে থাকা চাপ, বিষণ্নতা সবকিছুই কমে যেতে থাকবে। তাইতো ঘুরে এলাম শ্রীমঙ্গল।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান,
বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের সাতটি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১ হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। উদ্যানের বৃক্ষসারির মগডালে চোখ রাখুন দেখবেন বানর আর হনুমান লাফালাফি করছে। এতটুকু ভেতরে প্রবেশ করলে আপনার চোখে পড়বে খাটাশ, বনমোরগ, উল্লুক, মেছো ও বনবিড়ালসহ বিভিন্ন জীবজন্তু আর পার্কের বিশাল বিশাল বৃক্ষরাজি, জীবজন্তুর হুঙ্কার, ঝিঁঝি পোকার শব্দ, বানরের লাফালাফি, ঝাঁকে ঝাঁকে উল্লুকের ডাকাডাকি একটু সময়ের জন্য হলেও আপনার ব্যস্ত জীবনের অবসাদ দূর করে মনে এনে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া।
বাংলাদেশের সুইজারল্যান্ডখ্যাত দার্জিলিং টিলা,
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ চা বাগান। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে এমআর খান চা বাগানের অবস্থান। বাগানের ৭ নম্বর সেকশনটি অনেকটাই ভারতের দার্জিলিংয়ে অবস্থিত চা বাগানের মতো। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে দার্জিলিং টিলা।
দার্জিলিং টিলায় গিয়ে দেখা যায়, সবুজের সমারোহে মুগ্ধতা ছড়ানো দৃষ্টিনন্দন এ টিলা পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। প্রকৃতির সব সৌন্দর্যের সম্মিলন যেন এখানে। এমন অনিন্দ্য সৌন্দর্যে একাকার হয়ে আছে এ চা বাগান। দৃষ্টিজুড়ে কেবলই সবুজের সমারোহ। আঁকাবাঁকা পথ, ঢেউ খেলানো সমান্তরাল রাস্তা নিমেষেই যে কারোর মনে প্রশান্তির ঢেউ এনে দেয়। বাগানের প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ চমৎকার। বিশেষ করে এ বাগানের ৭ নম্বর সেকশনটি খুবই দৃষ্টিনন্দন এবং থাইল্যান্ডের হলুদ বাঁশ দেখতেই মনটা জুড়িয়ে গেল। হলুদ বাঁশ এবারই প্রথম দেখলাম। বাগানটিও দেখতে খুব সুন্দর। এটি দেখার জন্য বিভিন্ন সময় পর্যটকরা ঘুরতে আসেন শ্রীমঙ্গলে।
মাধবপুর লেক,
ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন মাধবপুর হ্রদটির আয়তন প্রায় ৫০ একর এবং দৈর্ঘ্যে ৩ কিলোমিটার; প্রস্থ স্থানবিশেষে ৫০ হতে ৩০০ মিটার। এখানে হ্রদের পানিতে রয়েছে নীল পদ্ম আর বেগুনি শাপলা; দেখা যায় গোলপাতা আর শালুকের ঝাড়। টিলার ঝোপঝাড়ে আছে নানা বর্ণের বুনোফুল, যাদের মধ্যে ভাঁটফুলই প্রধান। চা বাগানে বলে প্রাকৃতিক গাছের পরিমাণ স্বল্প; দেখা মেলে ছায়া বৃক্ষের। হ্রদের জলে দেখা মেলে বিভিন্ন জাতের হাঁস, সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি প্রভৃতি জলচর ও পরিযায়ী পাখির।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ,
চা-ঝরনা আর বনভূমির নয়নাভিরাম শহর শ্রীমঙ্গলে ১৩.৬ একর জায়গা নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম পাঁচতারকা মানের ‘গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ’। আধুনিক সব সুবিধাসহ ১ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর গড়ে তোলা ৯ তলা ভবনে রয়েছে ১৪৫টি কক্ষ। এতে রয়েছে একটি অসাধারণ নাইন হোল গলফ কোর্স। অন্যান্য খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে লন টেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলার সুবিধা। ইনডোর গেমসের মধ্যে রয়েছে বিলিয়ার্ড ও টেবিল টেনিসের সুযোগ। শিশুদের জন্য আলাদা খেলার জোনও রয়েছে রিসোর্টে। এদিকে রিসোর্টে অ্যামিবা আকৃতির বিশাল সুইমিংপুলসহ সুনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার মোট ৩টি সুইমিংপুল।
কখন যাবেন,
সাধারণত মে মাসে চাপাতা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত চলে। এ সময়ে কর্মচঞ্চল চা বাগান সবুজে পরিপূর্ণ থাকে। চা শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা দেখতে চাইলে মে থেকে অক্টোবরে ঘুরে আসতে পারেন শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগান থেকে। এ ছড়া বছরের যেকোনো সময় ঘুরতে যেতে পারেন চা বাগানগুলোয়।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন শ্রীমঙ্গল,
ঢাকা থেকে ট্রেন কিংবা বাসে করে সহজেই শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। প্রতিদিন দুপুর ১২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ে বেলা ৩টায়, বুধবার বাদে সপ্তাহের ছয় দিন রাত ১০টায় উপবন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশে ছাড়ে। পছন্দমতো সময়ে কোনো একটি ট্রেন করে শ্রীমঙ্গল যেতে পারেন সহজেই। ট্রেনের টিকিটের ভাড়া শ্রেণিভেদে ১৮৫ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে হানিফ, শ্যামলী, বিআরটিসি, এনা ইত্যাদি পরিবহনের ননএসি ও এসিবাস প্রতিদিনই শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসব বাসের সিটপ্রতি ভাড়া লাগে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। ঢাকা থেকে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও ঘুরে আসা যাবে শ্রীমঙ্গল থেকে। বাসে গিয়ে এক দিনে শ্রীমঙ্গল ঘুরে আসতে চাইলে ঢাকা থেকে রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দিতে হবে।