দুনিয়ার মোহ ও মুমিনের জীবন
মানুষের সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা, বরকত-সংকীর্ণতা সবই আল্লাহর হাতে। মহান আল্লাহ যাকে বরকত দেবেন, সে অল্পতেও তুষ্ট থাকবে, তার অন্তর ঐশ্বর্যমণ্ডিত ও প্রশান্ত থাকবে। আর যার থেকে বরকত তুলে নেওয়া হবে, তাহলে সে সোনার তৈরি ঘরের ভেতর হিরা খচিত খাটে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না। বরকত, প্রশান্তি দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ।
তাই দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা, শান্তি ও ঐশ্বর্য পেতে একমাত্র আল্লাহর আদেশকে প্রাধান্য দিতে হবে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নত পালন করতে হবে। পরকালকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জন করতে হবে।
কারণ প্রকৃত সফলতা পরকালীন সফলতা, যে কালের শুরু আছে, শেষ নেই। এর বিপরীতে দুনিয়াকে প্রাধান্য দিলে সেখানে না পাওয়ার যন্ত্রণা বেশি হতে পারে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহাপবিত্র আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব।
তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর হতাশা দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দরিদ্রতা দূর করব না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৭)
অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদমসন্তান, তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করো, আমি তোমার অন্তর ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করব না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬৬)
কারণ যারা মহান আল্লাহর হুকুম অমান্য করে দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়, মহান আল্লাহ তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না। তাদের আত্মিক শান্তি উধাও হয়ে যায়।
তারা ব্যর্থতার সাগরে হাবুডাবু খেতে থাকে। এবং ধ্বংস হয়ে যায়। প্রিয় নবী (সা.) তাঁর উম্মতদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এবং এই মহাবিপদ থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, আমি তোমাদের নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার সব চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখিরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অপর দিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৭)
আমাদের উচিত, দুনিয়া অর্জনের পেছনে জীবনটা নষ্ট না করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। পরকালকে প্রাধান্য দেওয়া এবং পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। তবেই আমাদের সব হতাশা দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ফলে আমাদের জীবনে স্থীরতা ফিরে আসবে এবং উভয় জাহানের সফলতা অর্জন হবে।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে সুসংযত করে দেবেন, তখন তার নিকট দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে। আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির গরিবি ও অভাব-অনটন দুই চোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট আছে, দুনিয়াতে সে এর চেয়ে বেশি পাবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬৫)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিদায়াত দান করুন। দুনিয়ার মরীচিকার মোহ ত্যাগ করে পরকালকে প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন।