Wednesday, April 2, 2025
Homeরাজনীতিআওয়ামীলীগআওয়ামী লীগ হটিয়ে শিক্ষা প্রশাসন জামায়াতিকরণ

আওয়ামী লীগ হটিয়ে শিক্ষা প্রশাসন জামায়াতিকরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক,

 

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের শাসনামলের ১৫ বছর জুড়ে শিক্ষা প্রশাসনের সর্বস্তরেই চালু করেছিল আওয়ামীকরণ। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে সচিব পর্যন্ত পুলিশের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ডিএনএ টেস্ট করে নিয়োগ দেয়া হতো আওয়ামীপন্থীদের।

 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়নি শিক্ষা প্রশাসন। বহাল তবিয়তে আছে আওয়ামীপন্থী সেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর যেসব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে সেখানে নতুন করে দলীয়করণ চালু করেছে জামায়াত! মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, বোর্ড কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ৫ আগস্টের পর যেখানেই নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই নিয়োগ পেয়েছে রাজনৈতিভাবে জামায়াত চেতনাধারীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। নেটিজেনদের অনেকেই এ নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। তাদের বক্তব্যÑ হাসিনার অলিগার্ক কর্মকর্তাদের সরিয়ে প্রশাসনে জামায়াতের অনুসারীদের নিয়োগ প্রশাসনের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে দলবাজি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

 

আওয়ামী আমলে তাদের বিরোধী মতাদর্শের মানুষকে যেমন নিয়োগ বঞ্চিত করা হতো, এখন সেই একই কায়দায় শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে জামায়াতবিরোধীরা। নেটিজেনদের অভিযোগ মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্রই ছেকে ছেকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে জাময়াতিদের। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ পাচ্ছেন না বিএনপিপন্থী কিংবা অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা উপদেষ্টা বিভিন্ন পদে নির্দলীয়, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করলেও সরকারে থাকা জামায়াতপন্থী এবং বেশ কয়েকজন সমন্বয়কের (শিবিরপন্থী) চাপে প্রতিবারই সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী প্রফেসর ড. এম আমিনুল ইসলাম জামায়াতপন্থীদের এই আধিপত্যের বিপরীতে মতামত দেয়ায় তাকে এক প্রকার কোণঠাসাই করে রেখেছেন সরকার ও সমন্বয়কদের মধ্যে থাকা জামায়াতপন্থীরা।

 

জানা যায়, ৫ আগস্টের পরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয় জামায়াতপন্থী এক কর্মকর্তাকে। তার মাধ্যমেই শিক্ষা প্রশাসনের কার্যত শুরু হয় জামায়াতিকরণ। তার হাত ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে একে একে নিয়োগ দেয়া হয় জামায়াতপন্থীদের। বাদ যায়নি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরসহ গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানে। আর যেসব পদে দলীয় নেতাকর্মীদের বসাতে পারেনি জামায়াত সেসব পদে বহাল তবিয়তে রাখা হয় আওয়ামীপন্থীদেরই। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা, শিক্ষক নেতারা ও নির্দলীয় শিক্ষক নেতারা সমালোচনা করলেও পরিবর্তন আসেনি কোনো কিছুতেই; বরং এখন আরো বেপারোয়াভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, অধিদফতর ও বোর্ডের বিভিন্ন কমিটিতে পুনর্বাসন করা হচ্ছে জামায়াতিদের।

 

সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যানদের মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান, সরকারি মাদরাসার প্রিন্সিপালের মধ্যে ঢাকা মাদরাসা-ই-আলিয়ার প্রিন্সিপাল, বেসরকারি মাদরাসার প্রিন্সিপালের মধ্যে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার (টঙ্গী) ড. মুহাম্মদ হেফাজুর রহমান, নরসিংদী জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসার মো. আব্দুস সামাদ আযাদ, বেসরকারি মাদরাসার তত্ত্বাবধায় বা সুপারিনটেডেন্ট হিসেবে হাফেজ আবদুর রাজ্জাক জামেয়া ইসলামিয়ার মুহাম্মদ নিজামুদ্দীন, মানিকদি এম আই দাখিল মাদরাসার ওয়ালিউল্লাহ হেলালী আল আফসারী ও মাদরাসা শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদ ক্যাগাটরিতে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল ড. মুফতি মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। নিয়োগ পাওয়া এসব প্রতিনিধির বেশির ভাগই জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত।

 

একইভাবে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গঠিত সিন্ডিকেটেও প্রাধান্য পেয়েছে জামায়াতপন্থীরা। আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্যরা হলেনÑ ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু জাফর খান, ট্রেজারার এএসএম মামুনুর রহমান খলিলী, ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শাযাআত উল্লাহ ফারুকী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার (ঢাকা) প্রিন্সিপাল ড. মুহাম্মদ আবু ইউছুফ খান, সিলেট শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ লুৎফর রহমান হুমাইদি, পাবনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব, অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ আমীর উদ্দিন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিঞা মো. নূরুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর প্রফেসর ড. মো. নিজাম উদ্দিন, গোপালগঞ্জ ছালেহিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশ মাদরাসা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল প্রফেসর মাহমুদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ও মতিঝিল মিছবাহুল উলুম কামিল মাদরাসার মাওলানা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান।

 

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম বলেন, সিন্ডিকেট গঠনে কোনো রকম দলীয় বিষয় দেখা হয়নি; বরং যারা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে বঞ্চিত ছিলেন তাদেরকেই সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এখনো যারা সুযোগ পাওয়ার মতো আছেন তারাও পরবর্তীতে সিন্ডিকেটে স্থান পাবেন।

 

শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী প্রফেসর ড. এম আমিনুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে নিয়োগ ও বিলম্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সৎ মানুষ খুঁজছি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন নিয়োগ দিতে যাই তখন আবার নানা বিষয় চলে আসে। তখন আবার সেটি পরিবর্তন করতে হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments