Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the td-cloud-library domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/sylheterkagoj/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
কমলগঞ্জে ইউএনও শেষ কর্মদিবসে কাঁদলেন ও কাঁদালেন  - Sylheter Kagoj : সিলেটের কাগজ |
Friday, April 18, 2025
Homeসিলেট বিভাগমৌলভীবাজারকমলগঞ্জে ইউএনও শেষ কর্মদিবসে কাঁদলেন ও কাঁদালেন 

কমলগঞ্জে ইউএনও শেষ কর্মদিবসে কাঁদলেন ও কাঁদালেন 

 

 

পিন্টু দেবনাথ :

 

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে গত বছরের ২০ আগস্ট যোগদান করেন জয়নাল আবেদীন। যোগদানের পর থেকে তিনি কমলগঞ্জ উপজেলার উন্নয়নে রাত-দিন কাজ করেছেন। সাধারণ মানুষের যে কোনো সমস্যা সমাধানে তিনি তাৎক্ষণিক ভূমিকা রেখেছেন। শান্তপ্রিয় কমলগঞ্জ উপজেলাকে দীর্ঘ ১৬ মাস সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে পরিচালনা করেছেন। নিজের সততা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে তিনি সবার মন জয় করে নিয়েছেন। যার ফলে সবার কাছে তিনি জনবান্ধব ইউএনও হিসাবে পরিচিতও লাভ করেছেন।

জয়নাল আবেদীন প্রায় ১৬ মাস কমলগঞ্জে দায়িত্ব পালন শেষে বদলিজনিত কারণে বিদায় নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) তাঁর শেষ কর্মদিবসে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি কমলগঞ্জের মানুষের সহযোগিতা আর আন্তরিকতার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লূত হয়ে ওঠেন। এসময় সরকারি কমকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হাজির হয়েছিলেন। ইউএনওর কথা শুনে তাদের চোখও অশ্রুশিক্ত হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জয়নাল আবেদীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সিলেট ওসমানীনগর উপজেলায় যোগাদান করার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের ২০ আগস্ট ইউএনও হিসাবে প্রথম কমলগঞ্জে উপজেলায় যোগদান করেন ৩৫ তম বিসিএস ক্যাডার জয়নাল আবেদীন। এখানে যোগদানের পর তিনি ধীরে ধীরে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। উপজেলার অসহায় মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের কাজের পাশাপাশি দিনরাত ছুটে গেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। প্রায় ২১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস এই উপজেলায়। সরকারী সেবা পৌছাঁতে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ছুটে গেছেন। সরকারি খাসজমি উদ্ধার, নিজ অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিদ্যালয় পরিদর্শন, শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণসহ প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলা থাকায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। সম্প্রতি উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মাধবপুর লেইকে “আই লাভ কমলগঞ্জ ” নামে একটি দৃষ্টিনন্দন বোর্ড স্থাপন করছেন যা এই লেইকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বই মেলা ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করে বাঙালি সংস্কৃতি মেলে ধরেছেন। ২০২৪ সালে ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। খেলাধুলার প্রসারে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করছেন। উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানের নারসামা রেলী নামে একজনকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন।

 

ইউএনও জয়নাল আবেদীনের পৃষ্ঠপোষকতায় লোকসংস্কৃতি বিষয়ক সংকলনগ্রন্থ আরণ্যক নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছে।

এছাড়া সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক ভূমিকা রেখেছেন। উপজেলায় শিক্ষা, সংস্কৃতি বিস্তার, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পথচলা সহজ করতে সময় সময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। উপজেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দূর্যোগ সময়ে সরকারি সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন জনবান্ধব ইউএনও জয়নাল আবেদীন।

 

কমলগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষজন বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সবসময় পাশে পেয়েছি। যেকোনো দুর্যোগ সময়ে দিনরাত সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছেন। সততা, আদর্শ ও কর্মদক্ষতায় মানুষের মন জয় করেছে তিনি। সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যারাই তাঁর কাছে এসেছেন, তাদের সমস্যা শুনে সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। যে কোনো কাজে যতবারই ফোন করেছে, ততবার ফোন রিসিভ করেছেন। উনার দরজা সাধারণ মানুষের জন্য সবসময় খোলা ছিলো। উনার চলে যাওয়া শুনে উপজেলার সাধারণ মানুষ আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছেন।

 

মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস খান বলেন, ইউএনও মহোদয় উপজেলায় শিক্ষার

মানোন্নয়নে কাজ করছেন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিজ অর্থায়নে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করছেন। উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সার্বিক অবস্থার খুঁজ রাখতেন। বিদ্যালয় পরিদর্শন করে শিক্ষা কার্যক্রমে

যখন যা প্রয়োজন তা পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। সত্যি তিনি একজন শিক্ষা বান্ধব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন।

 

মুন্সিবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদ আহমেদ তরফদার ও পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, কমলগঞ্জের ইউএনও মহোদয় মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করেছেন। যেকোনো সময় কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক মানুষকে সাহায্য করেছেন। ইউএনও মহোদয়কে আমরা সবসময় কাছে পেয়েছি। বন্যার সময় আমাদেরকে সাথে নিয়ে সারা উপজেলায় কাজ করছেন। তিনি কমলগঞ্জে আশার পর থেকে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করে মানুষের কাছে জনবান্ধব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন।

 

কমলগঞ্জের বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ইউএনও হিসেবে কমলগঞ্জ ছিলো আমার প্রথম স্টেশন। বৈচিত্র্যময় এই উপজেলায় দীর্ঘ ১৬ মাস কাজ করেছি। এখানকার মানুষের ভালবাসায় পেয়ে আমি মুগ্ধ। আমার কাজে সবাই আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করেছেন। দায়িত্ব পালনে আমি আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার সকল ভালো কাজের কৃতিত্ব কমলগঞ্জের মানুষের। ক্ষণিকের জন্য বিদায় নিলেও সারাজীবন কমলগঞ্জ বাসীর কথা মনে থাকবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments