দোয়ারাবাজার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
রনি আহমেদ।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে প্রতিপক্ষের আগুনে পুড়ে সর্বশান্ত ৫টি পরিবারের কাছে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘর নির্মাণের জন্য প্রতিটি পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া আজ রোববার রাতে সীমান্তের মৌলারপাড় গ্রামে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রফিক মিয়া,রিপন মিয়া,ফজলু মিয়া, মোছাম্মৎ সানু আক্তারের হাতে নগদ টাকা ও চেক তুলেদেন।
রোববার রাতে জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ৭০ কিলোমিটার দূরে মেঘালয়ের পাদদেশের মৌলারপাড় গ্রামে পৌঁছেন।
এতো রাতে জেলা প্রশাসক ক্ষতিগ্রস্তের জন্য সাহায্য নিয়ে যাবেন তা গ্রামবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা কেউ কল্পনা করতে পারেননি। ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি পরিবারের নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ ২৩ জন দীর্ঘ ৯ দিন যাবত রাতে স্বজনদের বাড়িতে দিনের বেলায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছিলেন।
তাদের অবর্ণনীয় কষ্ট দেখে জেলা প্রশাসক রাতের বেলায় সীমান্ত জনপদের প্রত্যন্ত পল্লীতে হাজির হয়ে আগুনে পোড়ে যাওয়া বাড়িঘর পরিদর্শন করে তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ টাকা সহায়তা দেন। এর আগে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব পরিবারে খাদ্য সহায়তা শীতবস্ত্র দেয়া হয়।
উল্লেখ্য ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন ৫টি পরিবারের বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।
এঘটনায় দোয়ারাবাজার থানায় ঝর্ণাবেগম নামের ক্ষতিগ্রস্তদের স্বজন বাদী হয়ে হামলায় জড়িত ৫০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আদালত থেকে ২৬ জন জামিনে মুক্ত হলেও অন্যতম অভিযুক্তদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ।
১৪ ডিসেম্বর সময় টেলিভিশনে এসংক্রান্ত একটি খবর প্রচারিত হয়। খবর প্রচারের পর উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের পাশে দাড়িয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। ক্ষতিগ্রস্ত ফজলু মিয়া বলেন, এতো রাতে জেলা প্রশাসক তাদের প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে গৃহনির্মাণের টাকা দেবেন কেউ ভাবতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ধারনার বাইরে গিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া তাদের পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বসত ঘরের ধ্বংসস্তুপ পরিদর্শন করে তাদের সঙ্গে কথা বলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ক্ষতিগ্রস্ত রফিক মিয়া বলেন, আমাদের মৌলারপাড়[ গ্রাম মেঘালয় পাহাড়ের কাছে সীমান্ত ঘেষা। জেলা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে সুরমা নদী পাড় হয়ে দূর্গম গ্রামে আসতে হয়। তাই বিকেলে হলেই এ গ্রামে কেউ আসে না। সেখানে একজন জেলা প্রশাসক রাতে তাদেরকে গৃহননির্মাণের জন্য টাকা দিয়েছেন।
এটি ভাবতে তাদের অনেক ভালো লাগছে। হাজেরা বেগম বলেন, জেলা প্রশাসক গভীর রাতে তাদের বাড়িতে আসবেন এটি গ্রামবাসী শুরুতে বিশ^াস করেনি। যখন রাত ৮ টার দিকে জেলা প্রশাসকের গাড়ি সহ তিনটি গাড়ি তাদের আগুনে পোড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বসত ভিটার আঙ্গিনায় আসে। তখন সবাই অবাক হয়ে যান।
এতো রাতে তাদের দেখতে এসেছেন একজন মানবিক মানুষ। এটি তাদের কাছে ছিলো অবিশ^াস্য অকল্পনীয় ঘটনা। জেলা প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা তাদের অবর্নণীয় কষ্টের কথা বলেন। গুরুত্বপূর্ণ দাগী আসামি এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় তারা নিরাপত্তা হীনতা মধ্যে রয়েছেন বলে জানান।
এসময় জেলা প্রশাসক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করেন। পরে দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল হক কে নির্দেশনা প্রদান করেন।
এসময় থানার ওসি জেলা প্রশাসককে দ্রুত মামলা প্রধান প্রধান আসামিদের গ্রেফতারের আওতায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিদেন। এছাড়া পরিবার গুলোকে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ^াস দেন তিনি।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল, দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল হক সহ মৌলারপাড় গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
মোঃ রনি আহমেদ
দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ।