গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি:
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রধান জনগুরুত্বপূর্ণ সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কে প্রশিক্ষণ বিহীন অপ্রাপ্ত বয়স্ক সিএনজি অটোরিক্সা চালকের অবহেলায় ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। যে সড়ক দিয়ে উপজেলা প্রায় সিংহ ভাগ মানুষ চলাচল করে থাকেন।
এছাড়া রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটক বাহি গাড়ির যাতায়াত। আয়তনে দেশের বৃহত্তর উপজেলার একটি ও জেলাশহর থেকে দূরত্ব বেশী হওয়ায় পন্যবাহী গাড়ির যাতায়াতের কোন কমতি নেই এই সড়কটিতে।
এছাড়া প্রধান এই সড়কটির দুই পাশে বিভিন্ন গ্রামের অবস্থান হওয়ায় রয়েছে অনেক স্কুল কলেজ মসজিদ মাদ্রাসা। তাই এই রাস্তা ব্যবহার করে সাধারণ যাত্রীর পাশাপাশি স্কুল কলেজ, মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ও মসজিদে মুসল্লিদের যাতায়াত। সব মিলিয়ে জন গুরুত্বপূর্ণ এই প্রধান সড়কটিতে এখন প্রশিক্ষণবিহীন অদক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক সিনএনজি চালকের দখলে।
কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকরা। ওস্তাদ (চালকের) কাছ থেকে শিখে লাইসেন্স ছাড়াই তারা বসেছে চালকের আসনে। অদক্ষদের হাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা দিনদিন জ্যামিতিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহু যানবাহনের মালিকরা দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন।
এলাকায় তিন চাকার যানবাহন দুরন্তপনায় চলছে প্রতিনিয়ত। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক ও উপসড়কে টমটম,অটোরিক্সা চালাচ্ছে অল্প বয়সী তরুন ও অদক্ষ চালকরা। গাড়ির মালিকরা বাধ্য হয়ে অদক্ষ শিশু-কিশোর দের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিচ্ছেন। প্রায় চালক ওস্তাদদের কাছ থেকেই শেখানো। নেই কোন লাইসেন্স। ঝুঁকি নিয়ে কিশোর চালকরা চালান গাড়ী ভোর সকাল থেকে রাত পয়ন্ত।
যাত্রীরা জানান, অল্প বয়সী তরুন চালকের সংখ্যা বেশি। ঝুঁকি জানার পরেও এসব গাড়িতে উঠতে বাধ্য হচ্ছি, কিছু করার নেই। প্রাপ্তবয়ষ্ক ও কিশোর ড্রাইবাদের কানে মোবাইল ফোন ও ইয়ারফোন লাগিয়ে রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে প্রায়ই দেখা যায়। যাত্রীরা সাবধান করলেও শুনেনা। এতেকরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন এখনই সময়ের গণদাবী। এদিকে জেলা ট্রাফিক পুলিশ ও আম্বরখানা সিএনজি চালিত অটো রিস্কা ট্রেড ইউনিয়ন ৭০৭ আম্বরখানা শাখার পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও এলাকাভিত্তিক তা মানা হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিজ্ঞ সিনিয়র সিএনজি চালক আক্ষেপের সুরে বলেন,বর্তমান সময়ের অপ্রাপ্তবয়স্ক সিএনজি চালকদের সাথে এক কথা বললে সে নয় কথা শোনায়। ওদের পিতা ঘরে ঘুমায় আর ছেলেকে গ্যাস নিয়ে আসার কথা বলে চালকের আসনে বসিয়ে দিয়ে সড়কে তাদের দাপট সিনিয়র জুনিয়র এর কোন মূল্য নেই।
গত ১৪ নভেম্বর অপ্রাপ্তবয়স্ক সিএনজি চালকের ধাক্কায় উপজেলা রুস্তমপুর ইউনিয়নের নূর মোহাম্মদ নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। ছোট বড় দুর্ঘটনা ও ঝগড়াঝাঁটি অহরহ লেগেই আছে।
কয়েক সচেতন তরুন জানান, সড়কের সবখানে অদক্ষ-অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকের ছড়াছড়ি। তারা অনেক দ্রুত বেগে গাড়ি চালায়। সড়কে দাঁড়ানো যাত্রী তুলতে হঠাৎ ব্রেক করে। এতে যাত্রীর সমস্যা হয়। এছাড়া গাড়ী খালি থাকলে উল্টো পথের যাত্রী নিতে এদিক ওদিক না তাকিয়ে হঠাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়। যাতেই যেকোন মুহূর্তে সড়ক দুর্ঘটনার আশংকা থেকেযায়।
দুর্ঘটনা থেকে রক্ষাকল্পে কিশোর,অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে এলাকার সচেতন মহল। তাছাড়া সরকারী ভাবে চালকদের প্রশিক্ষণ ও গাড়ি ও গাড়িচালকদের লাইসেন্স প্রদানে নমনীয় নীতির ব্যবস্থা গ্রাহনের দাবি তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটো রিক্সা ট্রেড ইউনিয়ন ৭০৭ আম্বরখানা শাখার সভাপতি আব্দুল মান্নান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কঠিন নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে কোন অদক্ষ লাইসেন্সবিহীন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চলককে গাড়ি না দিতে। জেলাভিত্তিক আমাদের নির্দেশনাগুলো মানা হলেও বিভিন্ন উপজেলার এলাকাভিত্তিক মানা হচ্ছে না। গতকাল থেকে আমি প্রতিটা স্টপিজে গিয়ে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে দিচ্ছি। এইরকম চালকের হাতে গাড়ী দিলে দুর্ঘটনার কোন দায়ভার কর্তৃপক্ষ নেবেনা। তিনি এইরকম চালকের হাতে গাড়ি দেখলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানান।