সিলেট প্রতিনিধি,
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ‘আগামীর বাংলাদেশ ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সিলেটের ছাত্র জনতাদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক লুৎফুর রহমান, আসাদুল্লাহ আল গালিব, মাহিন সরকার , রিফাত রশীদ, খান তালাত মাহমুদ রাফি, রফিকুল ইসলাম আইনী, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আশরাফ মাহদী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘ফ্যাসিস্টদের বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতির কোনো অধিকার নেই। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ছাত্র জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। অথচ তারা ফ্যাসিবাদের পরিপূর্ণ কাঠামোর নির্মুল করতে পারেনি। এখনো আওয়ামী লীগের থানায় আওয়ামী লীগের দোসর ওসিরা পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের দোসর সচিবেরা এসির বাতাস খাচ্ছে। এখনো আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হয়নি। এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা আমাদের শহিদ ও আহত ভাইবোনদের সঙ্গে বেঈমানি।
এখনো মুজিব বাদী সংবিধান বাতিল হয় নি। মুজিববাদী সংবিধান বাতিল না হলে যারা ক্ষমতায় যাবে তারাই ফ্যাসিস্ট হবে। শুধু খুনি হাসিনাই ফ্যাসিস্ট না আরো অনেক ফ্যাসিস্ট রয়েছে। মূলত সিস্টেমই ফ্যাসিস্ট বানায়। তাই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত না করতে পারলে ফ্যাসিবাদী প্রথা বিলুপ্ত হবে না। ২৪ এ যদি আমরাই ফ্যাসিবাদী প্রথা শেষ না করি আবার রক্ত দিতে হবে। আমরা ২৪ ই শেষ চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যাতে আর রক্ত দিতে না হয়।
ছাত্র জনতা কারো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, নির্বাচনের জন্য জীবন দেয় নি। কিন্তু এখন কিছু দল থেকে জনমুখী না হয়ে ক্ষমতামুখী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতার আসার জন্য আমাদের ভাইয়েরা জীবন দেয় নি। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, সিন্ডিকেট নির্মূলের জন্য জীবন দিয়েছে।
৭২ এর সংবিধান একটি রিপাবলিকের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারেনি বিধায় তা পুনর্লিখন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ফ্যাসিস্টদের প্রথম পুরুষ। তার নেতৃত্বে ভিন্ন একটি দেশের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগের এমপিরা সংবিধান রচনা করে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।
ভারত হিন্দু কার্ড ব্যবহার করে আসছে। তারা বাংলাদেশকে হিন্দু বিরোধী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। এই দেশে দুর্গা পূজায় মন্দির পাহারা দিয়েছে মাদরাসা ছাত্ররা এই দেশে হিন্দু কার্ড খেলতে দেব না।
আওয়ামী লীগ সংবিধানের মূলনীতি ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মীয় ট্রামকার্ড হিসেবে খেলেছে। দাঁড়ি টুপি ওয়ালা হলেই জঙ্গি বানিয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমাদের রাজাকার উপাধি দিয়ে ‘তুমি কে, আমি কে বাঙালি বাঙালি’ স্লোগান দিয়েছে। এদেশের অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ আমরা সবাই বাংলাদেশি। মুজিববাদী সংবিধানের বাঙালি জাতীয়তাবাদের অজুহাতে দেশের অন্যান্য জাতিসত্তার মানবাধিকার স্বীকৃতি দেয় না।
একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বললেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। একজন বঙ্গবন্ধুর ছবি নামাতে কষ্ট পায়। ফ্যাসিস্টদের কিছু ভোট পাওয়ার জন্য যারা বলে আওয়ামী লীগ আমাদের পরিবারের অংশ তাদের বাংলাদেশের ছাত্র জনতা রুখে দেবে। তাদের বিরুদ্ধেও আমরা দাঁড়াতে দ্বিতীয়বার ভাববো না।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অভ্যুত্থানকারীদের স্বীকৃতি দেয় না। তারা রাজনীতি করে কী করেছে। প্রতিটি বিপ্লব তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত হলেও তরুণদের রাজনীতি ষড়যন্ত্র করে তরুণদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হয়েছে। ফলে বিপ্লব পরেও সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ফ্যাসিবাদী প্রথা বিলোপ হয় না। আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের। ২৪ এর তরুণরা ৯০ এর মতো ৭১ এর ভুল করবে না । তরুণরা মুরব্বিদের থেকে পরামর্শ নেবে কিন্তু তাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা যাবে না। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না, চাঁদাবাজি থাকবে না। বৃদ্ধভাতা তার ঘরে পৌঁছে যাবে। এবার যদি না পারি আবার রক্ত দিতে হবে তবে মুক্তি মিলবে না।
আমরা ফ্যাসিবাদের কবর দেওয়ার কথা বলছি। নতুন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলেছি যাতে ২৪ এর মাধ্যমে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। যতক্ষণ না দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হবে ২৪ এর বিপ্লব শেষ হবে না। এর জন্য আমাদের সবাইকে সংঘটিত হতে হবে। ফ্যাসিস্টদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে।’