ইসলামী জীবন,
চাঁদাবাজি জুলুম ও বড় গুনাহ চাঁদাাবাজি ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতোই গর্হিত অপরাধ।
আমাদের দেশে বাজার, স্টেশন, বন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির নামে যা চলে, কিছু মানুষ সম্পূর্ণ অন্যায্য ও অধিকারবহির্ভুতভাবে পেশিশক্তি ব্যবহার করে মানুষের অর্থ লুট করে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা জুলুম; ডাকাতি, ছিনতাই বা চুরির মতোই গর্হিত অপরাধ এবং গুনাহের কাজ। এই প্রক্রিয়ায় যে সম্পদ অর্জন করা হয়, তা নিঃসন্দেহে অবৈধ ও হারাম।
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমরা একে অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করো না এবং মানুষের সম্পদের কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার জন্য বিচারকদের কাছে উপস্থাপন করো না। (সুরা বাকারা: ১৮৮)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি যদি কেউ বিচার ব্যবস্থা ব্যবহার করেও অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ গ্রহণ করে, তাও হারামই থাকে, বৈধ হয়ে যায় না।
পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ইসলামের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মুসলমানদের একটি প্রধান ও আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য ন্যায়পরায়ণতা। কোনো মুসলমান চাঁদাবাজির জুলুমের সাথে জড়িত থাকতে পারে না বা এই জুলুম সমর্থনও করতে পারে না।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, হকদারদের হক তাদের কাছে পৌঁছে দিতে। তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে কত উত্তম উপদেশই না দিচ্ছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন। (সুরা নিসা: ৫৮)
রিজিক উপার্জনের জন্য হালাল উপায় অবলম্বন করা জরুরি। দুর্নীতি, অন্যায়, অসততা, জুলুম বা অন্য কোনো অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করা হারাম, ওই সম্পদ খাওয়া, পরা ও অন্যান্য প্রয়োজনে খরচ করাও হারাম। হাদিসে এসেছে, হারাম সম্পদ খেয়ে মানুষের শরীরে যে রক্ত-মাংস হবে, তা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।
কাব ইবনে উজরা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হারাম পস্থায় উপার্জিত সম্পদ দ্বারা সৃষ্ট ও পরিপুষ্ট মাংসের জন্য জাহান্নামের আগুনই উপযুক্ত। (সুনানে তিরমিজি: ৬১৪)
অন্যের সম্পদ চাঁদাবাজি বা যে কোনো জুলুমের মাধ্যমে গ্রাস করে থাকলে তওবা করার পাশাপাশি তা তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া কর্তব্য। না হয় এই জুলুমের হিসাব কেয়ামতের দিন দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বান্দার হক ক্ষমা করবেন না। কেয়ামতের দিন নিজের সওয়াব দিয়ে বা অন্যের পাপের বোঝা নিয়ে মানুষের হক ও পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করেছে সে যেন তা থেকে মুক্ত হয় (ক্ষমা বা বদলার মাধ্যমে), কেয়ামতের দিন পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা-পয়সা থাকবে না। তখন জুলুমের সমপরিমাণ সওয়াব পাওনাদারের জন্য নিয়ে নেওয়া হবে। সওয়াব না থাকলে পাওনাদারের গুনাহগুলো তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি ৬৫৩৪)
আবু হুরায়ারা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন তার সাহাবিদের বললেন, আপনারা কি জানেন নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবিরা বললেন, আমরা তো মনে করি, যার ধনসম্পদ নেই, সে-ই নিঃস্ব।
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন দুনিয়া থেকে নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু পাশাপাশি সেসব লোকেদেরও নিয়ে যাবে যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে, কারও সম্পদ ভোগ করেছে, কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে প্রহার করেছে; এ ধরনের লোকদের তার নেকিগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। যখন তার নেকি শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে হবে আর তাকে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহিহ মুসলিম: ৬৭৪৪)
তাই অন্যের ওপর জুলুম করার ব্যাপারে খুব সাবধান থাকতে হবে। যেসব গুনাহ আল্লাহর হকের সাথে সম্পর্কিত তা আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন; তিনি রাহমানুর রাহিম। কিন্তু তিনি যেহেতু ন্যায়বিচারক, বান্দার হক তিনি ক্ষমা করবেন না। বান্দার হকের ক্ষমা বান্দার কাছেই পেতে হবে। দুনিয়াতে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমা না করালে কেয়ামতের দিন নিজের নেক কাজ তাকে দিয়ে দিতে হবে, তার পাপের বোঝা বহন করতে হবে; যে দিন একটা নেক কাজের মূল্য হবে সারা দুনিয়া এবং এর সব সম্পদের চেয়ে বেশি।