মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি :
বকেয়া মজুরি প্রদানের দাবীতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি)’র মালিকানাধিন ৫টি চা বাগানের শ্রমিকেরা।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে ৫টি চা বাগানের শ্রমিকরা একতিত্র হয়ে পাত্রখোলা চা বাগানের প্রধান ফটকের সম্মুখে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে। এ সময় বুধবারের মধ্যে পাওনা বকেয়া পরিশোধ না করলে কঠোর অবস্থানের হুশিয়ারি দেয় চা শ্রমিকরা।
মানববন্ধনে কমলগঞ্জ উপজেলার এনটিসি’র পাত্রখোলা, কুরমা, চাম্পারায়, মদনমোহনপুর ও মাধবপুর চা বাগানের চা শ্রমিকরা অংশ নেন। মানববন্ধনে চা শ্রমিকরা বলেন, তাদের ছয় সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। মজুরি না পেয়ে তারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মালিকপক্ষ বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করলে তাঁরা কাজে ফিরবে না। বিগত শারদীয় দুর্গাপূজার আগে বলল মজুরি দিয়ে দিবে। কিন্তু আমাদের মজুরি দেয়া হল না। টাকা না পেলে আমাদের সংসার চলবে কিভাবে, না খেয়ে মরতে হবে।
পাত্রখোলা চা বাগানের যুব নেতা প্রদীপ পাল বলেন, আমাদের চা শ্রমিকদের ঘরে খাবার নেই। তাঁরা অনেক কষ্ট করে চলছেন। যদি অনতিবিলম্বে বকেয়া মজুরি পরিশোধ না হয়, তবে চা বাগানগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
কুরমা চা বাগানের চা শ্রমিক নারী নেত্রী গীতা রানী কানু জানানম কুরমা চা বাগানে এখন অনেকেরেই কচু পাতা ভাতের নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে। বাজারে যে হারে জিনিসপত্রের দাম তাতে বাগানবাসীর অনেক কষ্ট হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। বাগানে ঊধ্বতন কর্মকর্তার সাথে বসে এটার একটা বিহিত করা দরকার, কতদিন বাগান এভাবে চলবে। এমনিতে মাত্র ১৭০ টাকা হাজিরা যা এখন বাজারের সাথে সামঞ্জস্য নয়। তারপরে আবার বাগান ঠিকমতো তলব বা হাজিরা পেমেন্ট ঠিকমতো দিতে পারতেছে না, আর কতদিন পরে বাগানের কচু পাতাও মিলবে না।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী জানান, দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করা শ্রমিক এক সপ্তাহের মজুরি না পেলে অবর্ণনীয় সমস্যায় পড়তে হয়। এরপরও মোট ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মজুরি পায়নি। কবে দেয়া হবে তার কোন নিশ্চয়তা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিতে পারছেন না। বিভাগীয় শ্রম দপ্তর এর উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক এর বিভিন্ন উদ্যোগ ও আশ্বাস মালিকপক্ষের ব্যর্থতায় ইতিপূর্বে সফল হয়নি।
এমতাবস্থায় হতাশ শ্রমিকরা গত সোমবার থেকে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের সমর্থন দিয়েছেন। শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি বা নতুন কোন দাবি নিয়ে কোন ধর্মঘট করছেন না। পাওনা পরিশোধ করলে পেট ভরে ভাত খেয়ে আগামীকাল কাজে যেতে শ্রমিকরা প্রস্তুত। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় মালিকদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি। সেই সঙ্গে মহাপরিচালক, শ্রম অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আবেদন করছি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, এনটিসির মালিকানাধীন চা বাগানগুলোর মজুরি সমস্যার বিষয়ে এর আগেও আন্দোলন করেছেন শ্রমিকরা। কিন্তু কোন সমাধানের পথ হয়নি। চা শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের সাথে আছে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার এমদাদুল হক জানান, সমস্যাটির সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হলে এ সমস্যা থাকবেনা।