Friday, November 8, 2024
Homeঅন্যান্যপ্রযুক্তিশাবিপ্রবিতে স্বস্তির বিচরণ

শাবিপ্রবিতে স্বস্তির বিচরণ

বিশেষ প্রতিনিধি,

 

দীর্ঘদিনের অ্যাকাডেমিক স্থবিরতা কাটিয়ে পুরোদমে শুরু হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষায় ফিরতে পেরে স্বস্তি পাচ্ছেন। আন্দোলন থেকে ফিরে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এমন স্বস্তির বিচরণ ক্যাম্পাসকে প্রাণোচ্ছল করে তুলেছে।

 

রোববার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার মাধ্যমে সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রাণভরা উচ্ছ্বাস নিয়ে বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রথমদিন থেকেই টার্ম টেস্ট দিয়ে আন্দোলন পরবর্তী ক্যাম্পাস জীবন শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বিভিন্ন কোর্সের বাকী থাকা সিলেবাসের ক্লাস হচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

 

জুলাই মাসে অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলনে কর্মবিরতিতে ঘোষণা করেন শিক্ষকরা। এর পরবর্তী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোটা সংস্কারের দাবিতে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন দফতরের প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। এতে পুরোদমে বন্ধ হয়ে পড়ে প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রশাসনিক স্থবিরতা ও অ্যাকাডেমিক স্থবিরতা কাটাতে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বদিউজ্জামান ফারুককে নিয়োগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তিনিও অনলাইনভিত্তিক ক্লাস কার্যক্রম চালু ছাড়া কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুতে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি।

 

এদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের পর ২৫ সেপ্টেম্বর জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় বিভাগগুলোকে ২০ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর মধ্যে আটকে থাকা চলতি সেমিস্টারের ক্লাস পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

 

তাই বিভাগগুলো ২০ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে সেমিস্টারসমূহের বাকী থাকা ক্লাস ও টার্ম টেস্ট নেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে ২৪ অক্টোবর থেকে সেমিস্টার ফাইনালের রুটিন প্রকাশ করেছে বলে জানায় বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা।

 

সরকার পতনের পর ক্যাম্পাস খোলার প্রথমদিন সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে ক্লাসে ফেরা শিক্ষার্থীদের বিচরণ শুরু হয়েছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে টার্ম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, সমাজকর্ম বিভাগ ও লোকপ্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্লাস কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।

এদিকে কেমি কৌশল ও পলিমার বিজ্ঞান বিভাগ, শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে কোনো ক্লাস বা টার্ম টেস্ট কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে এসব বিভাগগুলোর ২২ ও ২৪ অক্টোবরের থেকে সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হয় বলে জানান বিভাগুলোর শিক্ষার্থীরা। তাই এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহের জন্য বিভাগের অফিস কার্যালয়ে ভিড় করতে দেখা যায়। সবমিলিয়ে ক্লাস কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।

 

পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামান মোর্শেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাস খোলার প্রথমদিন কোনো ক্লাস কার্যক্রম ছিল না। ২৪ অক্টোবর সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হবে। তাই বন্ধুবান্ধব মিলে বিভাগে পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে আসছি। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসের জুনিয়র-সিনিয়র অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ। অনেকদিন পর আমরা সবাই একসঙ্গে হতে পেরে বেশ ভালোই লাগছে। সরকারপতনের আন্দোলনে আমরা প্রায় ৫ মাস পিছিয়ে গেছি। এখন পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ক্যাম্পাসে ফিরে মনটা অনেক হালকা লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময় স্বাভাবিক পড়াশোনার পরিবেশ বজায় থাকুক, এতটুকুই আমাদের চাওয়া।‘

 

অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাওসার আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলন পরবর্তী ক্যাম্পাসের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেকটায় ভিন্ন। আগে হলের সিটকেন্দ্রিক রাজনীতি চলত। প্রশাসন এখন হলের সিট বণ্টন করায় সে চিত্র এখন নেই। একইসঙ্গে এখনকার প্রশাসনও অনেক বেশি শিক্ষার্থীবান্ধব।’

 

লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী টিপু বলেন, “করোনা, ভিসি বিরোধী আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে আমরা অ্যাকাডেমিকভাবে প্রায় দুই বছর পিছিয়ে গিয়েছি। ক্যাম্পাসের আড্ডা, পড়াশোনা ও ক্লাস পরীক্ষা ছাড়া দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল। অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে ফিরে ক্লাস করলাম। ভালোই লাগছে। তবুও মনের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করে, কখন আবার সেশনজটে পড়ে যায়। সবকিছু কাটিয়ে রাজনীতি ও সেশনজট মুক্ত ক্যাম্পাসর প্রত্যাশা আমাদের।’

 

এর আগে, গত ২৬মে গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আজহা ছুটিতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরপর থেকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন; এরপর কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসহ সবকিছু বন্ধ করে দেয় সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে ছাত্রীরা তাদের হলে উঠতে পারলেও ছাত্ররা ৮ অক্টোবর থেকে হলে উঠে। তবে হলে উঠলেও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল দুর্গাপূজার জন্য। এতে সবমিলিয়ে ১৪৬ বন্ধের অস্থিরতা কাটিয়ে ক্লাসে ফিরে স্বস্তি প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছে। ঝুলে থাকা বিভিন্ন সেমিস্টারের পরীক্ষাগুলো আগামী ১৯ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সেশনজট নিরসনে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments