Saturday, November 23, 2024
Homeধর্মদাম্পত্য জীবনে সুখী হতে নবীজির ৯ নির্দেশনা

দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে নবীজির ৯ নির্দেশনা

 

বিবাহ নারী-পুরুষের মধ্যে যেমন পরিবার সৃষ্টিতে অবদান রাখে; তেমনি দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা অনুরাগ সৃষ্টি করে এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন ও শান্তি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে। পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সম্পূরক।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা) তাদের পোশাক’। (বাকারা:১৮৭)

সুস্থ ও সুখী সামাজিক জীবনের জন্য বিবাহ একটি প্রয়োজনীয় পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন। পবিত্র কুরআনে বিবাহ ও পারিবারিক জীবনকে পারস্পরিক সহমর্মিতা, অন্তরের অনাবিল সুখ ও শান্তির উৎস হিসেবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে। পরিবারের জন্য তারা পরস্পর সম্পূরক।

হাদিসের আলোকে দাম্পত্য জীবন সুখী ও মধুময় করে তোলার এবং একজন দায়িত্বশীল ও সফল স্বামীরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ৯ ‍উপায় তুলে ধরা হলো-

১: স্ত্রীর প্রশংসা করা

রাসুল (সা.) স্ত্রীদের প্রশংসা করতেন। ভালো কাজের জন্য শুকরিয়া জানাতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলের (সা.) স্ত্রীদের মধ্যে থেকে খাদিজার (রা.) চেয়ে অন্য কোনো স্ত্রীর প্রতি বেশি ঈর্ষাপোষণ করিনি। কারণ, রাসুল (সা.) প্রায় তার কথা স্মরণ করতেন এবং তার প্রশংসা করতেন’। (বুখারি: ৫২২৯)

২: দোষ গোপন রাখা

আমরা অনেক সময় অন্যের কাছে নিজের প্রিয় মানুষের সমালোচনা করে বেড়াই। এতে করে সংসারে কলহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয় এবং সুখ-শান্তি চলে যায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়’। (সূরা হুমাজাহ: ১)

৩: গোপনীয়তা ফাঁস না করা

স্বামী-স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস জঘন্যতম পাপ। নিজেদের একান্ত বিষয় অন্যের কাছে প্রকাশ করা গর্হিত অপরাধ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সে হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট পর্যায়ের যে তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সঙ্গে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়’। (মুসলিম: ৩৪৩৪)

৪: নিজেকে পরিপাটি রাখা

পুরুষরা তাদের সঙ্গিনীকে সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। ঠিক একইভাবে তারা তাদের সঙ্গীকেও সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীদের জন্য এমনই পরিপাটি থাকা পছন্দ করি, যেমন আমি তাদের ক্ষেত্রে সাজগোজ করে থাকতে পছন্দ করি’। (বায়হাকি: ১৪৭২৮)

৫: ঘরের কাজে সহযোগিতা করা

কর্মব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও যখনই ঘরে ফিরবেন তখন একটু সময় বের করে চেষ্টা করবেন স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করার। বিশেষ করে ছুটির দিনটিতে দু’জনে ঘর গোছানোর কাজ শেয়ার করে নিন।

আসওয়াদ (রহ.) বলেন, আমি হজরত আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সা.) ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন? তিনি বললেন, ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিজনের সহায়তা করতেন। আর সালাতের সময় সালাতে চলে যেতেন’। (বুখারি: ৬৭৬)

৬: ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা

স্ত্রীর জন্য সামর্থ্যানুযায়ী ভরণপোষণের ব্যবস্থা করুন। এক্ষেত্রে কৃপণতা পরিহার করে সাওয়াবের আশা রাখুন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সাওয়াবের আশায় কোনো মুসলিম যখন তার পরিবার পরিজনের প্রতি ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসেবে গণ্য হয়’। (বুখারি: ৫৩৫১)

৭: মারধর না করা

স্ত্রীদের মারধর করা চরম অন্যায় আর নিম্ন মানসিকতার পরিচয়। আবদুল্লাহ ইবনে যামআ (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদের গোলামের মতো প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে’। (বুখারি: ৫২০৪)

৮: স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসুন

স্ত্রী যখনই আপনার সামনে আসবে তখনই তাকে মুচকি হাসি দিয়ে সম্ভাষণ জানান। বেশিরভাগ সাক্ষাতের সময়, আর বিদায়ের সময় নিবিড় আলিঙ্গনে তাকে বেঁধে রাখুন কিছুক্ষণ। ভেবে দেখুন, আপনার স্ত্রী যদি সবসময় আপনাকে হাসি-খুশি দেখে তাহলে আপনার জীবন কেমন সুখময় হবে!

৯: স্ত্রীকে সুন্দর নামে ডাকা

আপনার জীবনসঙ্গীনিকে ডাকার জন্য খুব সুন্দর একটা উপনাম নির্বাচন করুন। কখনও তাকে কোনো বাজে নামে বা মন্দ শব্দে ডাকবেন না।

আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ভালোবেসে কখনো কখনো আমার নাম হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন। (ইবনে মাজাহ: ২৪৭৪)।

লেখক: শিক্ষার্থী, শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments