Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the td-cloud-library domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/sylheterkagoj/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
নদী থেকে অ*বৈধভাবে বালু উত্তুলনের ডন সুজন - Sylheter Kagoj : সিলেটের কাগজ |
Saturday, April 19, 2025
Homeসিলেট বিভাগসুনামগঞ্জনদী থেকে অ*বৈধভাবে বালু উত্তুলনের ডন সুজন

নদী থেকে অ*বৈধভাবে বালু উত্তুলনের ডন সুজন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি,

 

ছাতক উপজেলার কয়েকটি মৌজায় জলমহালে বছরের পর বছর ধরেই চলছে অবৈধ পন্তায় চলছে বালু ও মাটি উত্তোলন। যে কারনে হুমকির মুখে রয়েছে স্থানীয় বনভুমি, ফসলি জমি, পরিবেশ ও এলাকার জীববৈচিত্র। এসব অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলনে গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামীলীগের স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ভুমি খেকো ও লুটেরাদের কারনে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বেশ কয়েকটি মৌজার বনভুমি ও ফসলি জমি ধ্বংসের মুখে, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর। এবিষয়ে ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইতিমধ্যেই সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাতক উপজেলার ১নং ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী অঞ্চলের রাজেন্দ্রপুর, সৈয়দাবাদ, বাহাদুরপুর ও ইসলামপুর মৌজা জুড়ে রয়েছে ৬১৪১.৯০ একর ফরেস্ট বিভাগের বনভুমি এবং পেকুয়া ও গুয়াপাগুয়া নামে বিশাল জলমহাল। সরকারি বনভুমিতে রয়েছে কয়েক লাখ মুর্তা বাগান ও বিভিন্ন জাতের গাছ যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে যুগান্তকারী ভুমিকা পালন করছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী পক্ষে এলাকার দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চটিবহর আমবাড়ি গ্রামের হাজী তৈমুছ আলীর ছেলে সুজন মিয়া ও তার সহযোগীরা পিয়াইন নদী বালু মহাল ইজারার নামে ও পেকুয়া এবং গুয়াপাগুয়া জলমহাল সাবলীজের নামে রাজেন্দ্রপুর মৌজার চৈলতারঢালা, সৈয়দাবাদ, বাহাদুরপুর ও ইসলামপুর মৌজার সরকারি ফরেস্ট বিভাগের বনভুমি ও জনসাধারনের ফসলি জমির তীরে এবং জামুরা এমদাদ নগর গ্রামের পাশে প্রতিদিন শতাধিক বোমা মেশিন ও ড্রেজার ব্যবহার করে ৭০/৮০ ফুট গভীর হতে বালু মাটি উত্তোলন করে শত শত ইঞ্জিন চালিত নৌকা বোঝাই করে সরবরাহ করা হচ্ছে। যা ২০১০ইং সালের মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। ২০২১ সালে পিয়ান নদী ও চেলা নদীতে বৈধ বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ছাতক নৌ-পুলিশ বাঁধা দিলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর লোকজন কয়েকজন নৌ-পুলিশ সদস্যদের উপর হামলায় কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

এছাড়াও গত ২০২২-২৩ইং সালেও গোয়ালগাঁও, ইসলামপুর, জামুরা ও গনেশপুর গ্রামের পিয়াইন নদী ও চেলা নদীতে অবাধে বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে তান্ডব চালালে ইউনিয়নবাসী তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে থানা পুলিশ কয়েকটি নৌকা ও ড্রেজার মেশিস আটক করে। অবৈধ ড্রেজার মেশিন চালানোর অভিযোগে ওই সময়ে বালু মহাল ইজারাদার সুজন মিয়া ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ভুমি খেকোদের অপতৎপরতা বন্ধে ইসলামপুর ইউনিয়নবাসীর পক্ষে পরিষদের কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান।

ওই সংবাদ সম্মেলন করায় প্রভাবশালীদের প্ররোচনায় ভুমি খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই গত ১০ জুলাই ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করা হয়। উক্ত মামলা থেকে সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। একই মামলার ২০নং আসামী জুয়েল মিয়া ১৪ জুলাই রাতে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথে ভুমি খেকোর লোকজন তাকে অপহরন করে নিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়।

এ ঘটনায় জুয়েলের মা রুজিনা আক্তার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁপে ঘটনাটি ধামাচাঁপা পড়ে যায়। হামলায় আহত অসহায় জুয়েল এখনও নিজ বাড়ীতে বিছানায় কাতরাচ্ছে। ভুমি খেকোরা বিগত ৩ মাস যাবৎ রাতের আধারে বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রতিদিন ৬/৭ লাখ ঘনফুট বালু ও মাটি উত্তোলন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করছে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ বালু খেকো চক্র অস্ত্রের মহড়া দিয়ে দিনরাত অবৈধ ভাবে বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করে দেদারসে বিক্রি করছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এড.মুহাম্মদ সুফি আলম সুহেল নৌকা যোগে রাজেন্দ্রপুর ও সৈয়াবাদ মৌজায় অবৈধ ভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের দৃশ্যের ছবি এবং ভিডিও চিত্র ধারন করে ফেরার পথে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা লাটিসোটা নিয়ে চেয়ারম্যানের উপর হামলার চেষ্টা করে।

এসময় তার চিৎকারে নদীর তীরের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যানকে গুম ও প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সোনাই নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। ওরা প্রভাবশালী হওয়ার কারনে সাধারন মানুষ ওই চক্রের বিরুদ্ধে কোন ধরনের প্রতিবাদ বা বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। বিষয়টি মৌখিক ভাবে থানা পুলিশ ও একাধিকবার অবহিত করা হলেও কোন সুফল হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এড.সুফি আলম সুহেল বলেন, বালু মহাল ইজাদার সুজন মিয়া আওয়ামীলীগের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন। তার এই সিন্ডিকেটে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। এলাকার ফসলি জমি, পরিবেশ ও এলাকার জীববৈচিত্র অবৈধ ভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা একান্ত জরুরী।

ছাতক বালু ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি আব্দুস ছাত্তার ও সাধারন সম্পাদক মো.দিলোয়ার হোসেন বলেন, এখানকার পিয়াইন নদী বালু মহাল ছাড়াও একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধ বালু উত্তোলনে তান্ড চালাচ্ছে। এবিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট উর্ধতণ কর্তৃপক্ষের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযুক্ত সুজন মিয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছাতক শহরে তার ব্যবসায়িক অফিস থাকলেও সেটির দরজায় তালা ঝুলছে। মুটোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে না পাওয়ায় এবিষয়ে কোন মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া হাসান বলেন, পিয়াইন নদী বালু মহাল ইজারা সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ট্রাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে এসব অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরও কেউ লিখিত অভিযোগ করলেও তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো.আবু নাসের বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন বেশ কয়েকবার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা ও বল্কহেড আটক করা হয়েছে। এবিষয়ে ইজারা নিয়মনীতি ভঙ্গ করায় এটি বাতিল করতে প্রায় একমাস পূর্বে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি সুপারিশ করা হয়েছে।

এবিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.মো.ইলিয়াছ মিয়া বলেন, ইজারা বাতিলের বিষয়ে এক সভায় আলোচনা করা হয়েছে। আমাকে ছাতকের এসিল্যান্ডও বাতিলের ব্যাপারে একটি লিখিত সুপারিশ করেছেন। এবিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments