স্বাস্থ্যসেবা প্রতিবেদক :
পাকা কলায় রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। তাই কলা খাওয়া মানেই শরীরে পটাশিয়াম প্রবেশ করানো। জেনে রাখা ভালো যে, দেহে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়তে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। আর এমনটা হলে আয়ু বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। তাই প্রতিদিন এই ফলটি খেলে শরীরের যে কোনো ক্ষতিই হয় না – এই কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে হার্টে রক্ত সরবরাহকারী শিরা – ধমনীগুলো স্টিফ হতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরাসরি এর প্রভাব পরে হার্টের ওপর। সেই কারণেই তো হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে কলা যে শুধু হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতেই কাজে লাগে, এমনও কিন্তু নয়। প্রতিদিনের ডায়েটে কলাকে জায়গা করে দিলে পাওয়া যায় আরও অনেক উপকারিতা।
এনার্জির ঘাটতি দূর করে :
বছরের শেষেও অফিসে এমন কাজের চাপ যে ক্লান্তি ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে বাড়তে মাত্রা ছাড়িয়েছে ? এমন পরিস্থিতিতে একটা কলা খেয়ে নেবেন সব সময়। তাহলেই দেখবেন অনেক চাঙ্গা লাগবে। কারণ ক্লান্তি দূর করতে কলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এই কারণেই তো অ্যাথেলিটদের রোজকার ডেয়েটে আর কিছু থাকুক না থাকুক, কলা থাকেই!
ওজন কমাতে সাহায্য করে :
কলায় পটাশিয়াম ছাড়াও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। এতে করে খাওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু হয়। আর কম খেলে যে ওজনও কমে, সে কথা কার না অজানা! ফাইবার কনস্টিপেশনের মতো রোগ সারাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় :
কলা খাওয়ার পর যদি কলার খোসা মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে একদিকে যেমন ত্বকের রোগের প্রকোপ কমে, তেমনি স্কিনের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসে। আসলে কলার খোসার ভেতরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কলার খোসায় থাকা উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিডও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পুষ্টির ঘাটতি দূর করে :
শরীরের সচলতা বজায় রাখতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় ভিটামিন এবং মিনারেলের প্রয়োজন পরে শরীরের। আর এইসব উপাদানের যোগান শরীর পায় খাবারের মাধ্যমে। কিন্তু সমস্যাটা হলো – আজকের প্রজন্ম এতটাই ব্যস্ত যে, তাদের হাতে ঠিক মতো খাওয়া – দাওয়া করার সময় নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, পুষ্টির ঘাটতি হওয়ার কারণে নানাবিধ রোগ এসে বাসা বাঁধে শরীরে।
এমন পরিস্থিতি কলা কিন্তু দারুন কাজে আসতে পারে। এই ফলটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন এবং মিনারেল। সেই সঙ্গে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফলেটের মতো উপাদান, যা শরীরকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এবার থেকে ঠিক সময় খাবার খাওয়া সুযোগ না পেলে ২-৪টি কলা খেয়ে নিতে ভুলবেন না যেনো!
রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে :
কলায় উপস্থিত পটাশিয়াম শরীরে লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফলে নিয়মিত কলা খেলে দেহে লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।
হজম ক্ষমতা বাড়ায় :
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে কলার ভেতরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটে। তাহলে আজ থেকেই নিয়মিত কলা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
রক্তাল্পতা দূর করে :
কলায় রয়েছে বিপুল পরিমাণে আয়রন, যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করার মধ্যে দিয়ে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যারা এমন রোগে ভুগছেন, তারা আয়রন ট্যাবলেটের পাশাপাশি যদি নিয়ম করে কলা খেতে পারেন, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার মিলতে পারে।
হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় :
ইউনিভার্সিটি অব লিডসের গবেষকদের করা এক স্টাডিতে দেখা গেছে, কলার মতো ফাইবার সমৃদ্ধ ফল প্রতিদিন খাওয়া শুরু করলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে করোনারি ডার্ট ডিজিজও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। তাই পরিবারে যদি হার্টের রোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে নিয়মিত কলা খেতে ভুলবেন না যেনো!