নিজস্ব প্রতিবেদক,
সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ সানি আহমদের পিতা কয়ছর আহমদ সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ কয়ছর আহমদের দাখিলকৃত এজাহার রেকর্ডভূক্ত না করে স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মীর দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে এজাহার পরিবর্তন করেছে। মামলার মূল আসামীদের বাদ দিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগসহ কিছু নিরপরাধ মানুষকে আসামী করে মামলা রেকর্ডভূক্ত করেছেন। এছাড়া তিনি আদালতে মামলা দাখিল করায় বিএনপি সমর্থিত কিছু আইনজীবী, বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও গোলাপগঞ্জ থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ মীর নাসির আদালতের মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীকে হুমকি, ধমকি ও চাপ দিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উপজেলার ঢাকা-দক্ষিণ এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রজনতা মিছিল সহকারে ঢাকা দক্ষিণ বাজার হইতে গোলাপগঞ্জ পৌরসভা চৌমুহনীতে যাওয়ার সময় ধারাবহর পৌঁছালে আইনশৃঙ্খলাকারী বাহিনীর সদস্য পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বোচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের দুষ্কৃতিকারীরা দেশী-বিদেশী অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গুলিবর্ষণ করো। পুলিশ-বিজিবির তাজাগুলিতে সানি আহমদের মৃত্যু হয়। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কর্তব্যরত ডাক্তার না পেয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরদিন সানি আহমদের লাশ দাফন করা হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনার পর থেকে স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী বিভিন্ন প্রলোভনে তাদের তৈরিকৃত এজাহারে স্বাক্ষর প্রদান করে মামলা দায়েরের পরামর্শ দিলে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ২৫:আগস্ট উপজেলা ভূমি অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ রায়, গোলাপগঞ্জ মডেল থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ মাসুদুল আমীনসহ গোলাপগঞ্জ থানার পুলিশ, বিজিবি ও গোলাপগঞ্জের আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দাখিলের পর ২৭ আগস্ট রাতে বিএনপি সমর্থিত জামাল, কবির, স্থানীয় ঢাকাদক্ষিণ ইউপির সদস্য মকবিল মেম্বার তার বাড়িতে গিয়ে থানার বর্তমান অফিসার্স ইনচার্জ মীর নাসিরের কথা বলে দাখিলকৃত এজাহার মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে জানিয়ে বেশ কয়েকটি সাদা কাগজে তাদের স্বাক্ষর নেন। কিন্তু কোনো অগ্রগতির কথা থানা থেকে জানানো হয় নি।
পরবর্তীতে ২ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলী আদালতে মামলা করলে আদালত গোলাপগঞ্জ মডেল থানাকে এফআইআর করার নির্দেশ দেন। আদালতে মামলার পর তিনি জানতে পারেন, গোলাপগঞ্জ থানায় দেওয়া অভিযোগ আমলে না নিয়ে স্থানীয় বিএনপির লোকজনসহ গোলাপগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর জামিল আহমদের ইন্ধনে বিএনপির লোকজন আমার সাদা কাগজে নেওয়া স্বাক্ষরিত কাগজে এসিল্যান্ড, পুলিশ ও বিজিবিসহ যারা এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত তাদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদের আসামী করে একটি মামলা রেকর্ড করে নিয়েছে থানা পুলিশ।
কয়ছর আহমদ লিখিত বক্তব্যে আরো অভিযোগ করেন, গোলাপগঞ্জ থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ মীর নাসির অদৃশ্য কারণে গোলাপগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ রায়, ঘটনার সময়কার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুল আমীন ও থানা পুলিশ-বিজিবিকে মামলা থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মামলার মূল এজাহার পরিবর্তন করে মামলা রেকর্ড করেন। এদিকে আদালতে মামলার পর থেকে গোলাপগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী আমাকে আদালতে দাখিলকৃত মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছেন। আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিলেটের ডিআইজি মহোদয় ও পুলিশ সুপার মহোদয় বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানিয়েছেন সন্তানহারা পিতা। কয়ছর আহমদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন সানির মামা আলি আব্বাস। উপস্থিত ছিলেন শহীদ সানির মা রুবিয়া বেগম ও চাচা রাজু আহমদ।