বিশেষ প্রতিবেদন,
আমাদের বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইতে পারা ছিল খুব গৌরবের কাজ। আমরা সকালে স্কুলের সমাবেশে দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ কণ্ঠে গানটি গাইতাম। সে এক দুর্দান্ত অনুভূতি! আমার সোনার বাংলা ছিল আমার মুখস্থ করা প্রথম গান। পরবর্তীতে আমি যখন প্রথম টিভিতে জাতীয় ফুটবল বা ক্রিকেট দলের খেলা দেখি কিংবা প্রথম যখন প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে প্রথম বাংলা সিনেমা দেখা শুরু করি তখন জাতীয় সঙ্গীতের সুর বাজিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা আমার মধ্যে এক অদ্ভূত দেশপ্রেমের জন্ম দিত।
এটি এমন এক সুর যদি আপনি গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে শোনেন তাহলে আপনার মস্তিষ্কের অ্যাড্রেনালিনে ভীষণ এক তাড়না অনুভব করবেন। তবে বহু বছর ধরে আমার সোনার বাংলা গানটি আমাদের কাছে দূরদেশের কোনো গানে পরিণত হয়ে গেছে। আপনি যদি স্থানীয় নাগরিক হন তাহলেও আপনি এটি রাস্তায় বা ইউটিউবে সচরাচর শুনতে পাবেন না।
গত দুই দশকে আমি সত্যিই ‘আমার সোনার বাংলার’ প্রেমে পড়েছি। আমি একবার গড়াই নদীর তীরে গঙ্গারামখালি ঘাটের একটি চায়ের দোকানে বসে ইউটিউবে গভীর মনোযোগ দিয়ে গানটি শুনেছিলাম। তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল এবং গড়াইয়ের পাড়ে চায়ের দোকানে বসে থাকা আমরা কয়েকজন একমনে সেই বৃষ্টি দেখছিলাম যা ঐ এলাকায় যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল। আমি এই গানটি বারবার শুনেছি মাগুরা, মানিকগঞ্জ এবং নরসিংদী গ্রামে বট গাছের নীচে বসে। দীর্ঘ ওয়াপদা রোডে শীতের সকালে হাঁটার সময় আমি এটি শুনেছি।
আমার উপলব্ধি হলো আপনি যদি কোনো সুন্দর গ্রামীণ রাস্তায় বা একটি পুরাতন নদীর ঘাটে বা দুই শতাব্দীর পুরানো কোনো বট গাছের নীচে বসে আমার সোনার বাংলা না শুনেন তবে আপনি কখনই এই গানের আসল শক্তিটি কোথায় তা জানতে পারবেন না। একজন শক্তিশালী লেখকের দ্বারা রচিত একটি লোকগীতি হলো এই আমার সোনার বাংলা। এই গানের রাজনৈতিক পটভূমি আমাদের বার বার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। তবে আমার কাছে এটি একটি আধ্যাত্মিক গান, যা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আদিম থেকে তার আসল সারমর্ম পরিগ্রহণ করে। আপনি গ্রামাঞ্চলের সমস্ত বড় মৌসুমে যদি এই গানটি না শুনেন তবে কখনোই এই গানের মাধুর্য উপলব্ধি করতে পারবেন না।