বিশেষ প্রতিনিধি,
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুরে গতকাল সোমবার (২৬ আগস্ট) ও আজ মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুই দিনের সংঘর্ষে সংবাদকর্মীসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলার মিরপুর বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই উপজেলার লামাতাশী গ্রামের দর্জি আলফু মিয়ার সঙ্গে বানিয়াগাঁও গ্রামের আকল আলীর ছেলে আল আমিনের কথা কাটাকাটি হয়।
এ সময় বিষয়টি সমাধান করার জন্য বানিয়াগাঁও গ্রামের আ. শহিদ মিয়ার ছেলে সাদ্দাম মিয়া চেষ্টা করলে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আলফু মিয়ার লোকজন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বানিয়াগাঁও ও লামাতাসি গ্রামের লোকজন। দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে দুই গ্রামবাসী মিরপুর বাজারে অবস্থান নেন এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
পরবর্তীতে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হলে বানিয়াগাঁও গ্রামের সঙ্গে পশ্চিম জয়পুর আর লামাতাশীর সঙ্গে পাঁচগাঁও গ্রামবাসী যোগ দেন। এতে সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ অবস্থায় রূপ নেয়। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি কয়েকটি দোকান ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নেভায়।
এদিকে বাহুবল মডেল থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রের ঝলকানিতে রাতের অন্ধকারে তারা পিছু হটেন। এ সময় তুমুল সংঘর্ষে মিরপুর বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের লোকজন সালিশের আশ্বাসে শান্ত হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়।
সংঘর্ষে লামাতাশী গ্রামের পক্ষে লামাতাশী ইউপি চেয়ারম্যান উস্তার মিয়া, পাঁচ গ্রাম নেতা ফয়সল মিয়া, শ্রমিক নেতা আসকর আলী, অধ্যক্ষ মুফতি মুহাম্মদ বদরুর রেজা, কাজল নেতাসহ এলাকার অনেক মুরুব্বি। আর বানিয়াগাঁও’র পক্ষে প্রভাষক আয়ুব আলী, শামসুল ইসলাম, রজব আলী চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দেন।
উভয়ের পক্ষের সংঘর্ষ মীমাংসার চেষ্টা করেন উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বাহুবলের মাওলানা কামরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মুফতি মুহাম্মদ বদরুর রেজা সেলিম প্রমুখ। কথা হয় মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিনের বেলা সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা হবে। এরই প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার সকালে মীমাংসার জন্য গণি জাহান কমপ্লেক্সে বসেন লোকজন। একপর্যায়ে মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীমকে নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লামাতাশী গ্রামের লোকজনদের কাছে যান তারা।
এ সময় লামাতাশী গ্রামের লোকজন চেয়ারম্যানের ওপর হামলা করে। এই খবর মুহূর্তের মধ্যেই ৮ গ্রামের লোকজনের মধ্যে জানাজানি হয়ে পড়লে পুনরায় গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে ঝড়িয়ে পড়েন। বৃষ্টির মতো চলে উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। সংঘর্ষের খবর পেয়ে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজন যান সামাল দেওয়ার জন্য।
একপর্যায়ে সদ্য বিদায়ী চুনারুঘাট উপজেলার চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়কত হাসান, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি, জামায়াত ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ লাল পতাকা উড়িয়ে সংঘর্ষকারীদের নিয়ন্ত্রণে নেন। সংঘর্ষ শেষ হলে বিকেল ৪টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
এ ব্যাপারে জানতে বাহুবল মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।