বিশেষ প্রতিনিধি,
সুনামগঞ্জে তিন দফা বন্যা ও দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে ধস নেমেছে সুনামগঞ্জের পর্যটন খাতে। একের পর এক বাতিল হয়েছে পর্যটকদের ভ্রমণের বুকিং। ফলে গত দুই মাসে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে এ জেলা। এতে প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতিতে যেমন ভাটা পড়েছে তেমন এই মৌসুমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যতদূর চোখ যায় শুধু অথৈই পানি। নীল আকাশের নিচে এমন দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে ভ্রমণপিয়াসীরা ছুটে আসেন হাওরে। এবার সুনামগঞ্জের হাওরে সে ভ্রমণপ্রেমীদের দেখা মিলছে না। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলাদ্রী লেক, লাকমা ছড়া, বারিকাটিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, নীল ঝরনাসহ পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকের ঢল নেই। আর এতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে হাউসবোট তৈরি করা তরুণ উদ্যোক্তারা পড়েছেন চরম লোকসানের মুখে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের তরুণ উদ্যোক্তা অমিত রায়। ২০২২ সালে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মনসা মঙ্গল’ ও ‘চণ্ডী মঙ্গল’ নামে দুটি হাউসবোট নির্মাণ করেছিলেন। সেখান থেকে প্রথম মৌসুমে আয়ও করেছিলেন প্রায় ১৭ লাখ টাকা। সেজন্য ২০২৪ সালের শুরুতেই নতুন আরেকটি ‘দা আর্ক নামে’ হাউসবোট নির্মাণ করেন। কিন্তু বন্যার কারণে আশানুরূপ পর্যটক না আসায় লোকসান গুণতে হচ্ছে এই উদ্যোক্তাকে। সেইসঙ্গে পর্যটক না থাকায় বোটের দোলনায় বসে মোবাইলে টিকটক দেখে অলস সময় পার করছেন তিনি।
এই উদ্যোক্তা বলেন, গত মৌসুমে সুনামগঞ্জের পর্যটন স্পট ঘুরতে অনেকে এসেছেন। কিন্তু এই মৌসুমে বন্যা ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ থাকায় পর্যটকরা ঘুরতে আসছেন না। এতে আমাদের প্রতিনিয়ত লোকসান গুণতে হচ্ছে।
এদিকে জুনের শুরুতে সুনামগঞ্জের হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এলেও হঠাৎ করে জুনের মাঝামাঝি থেকে লাগাতার ৩ দফা বন্যার কারণে সুনামগঞ্জের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
তবে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো খুলে দেওয়া হয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো। কিন্তু দেশের চলমান আন্দোলনের জন্য কারফিউ জারির পর পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ে এই জেলা। এতে প্রায় ৪ শতাধিক হাউসবোট এখন পর্যটকদের অপেক্ষায় শহরের সুরমা নদীর সাহেববাড়ি, মল্লিকপুর, লঞ্চঘাট, অচিন্তপুর ঘাটে নঙ্গর করে অলস সময় পার করছে।
তরুণ উদ্যোক্তা রাহাত, সজিব ও তানভীর জানান, সুনামগঞ্জে পর্যটন কেন্দ্রগুলো এই সময়ে চাঙা থাকার কথা। কিন্তু চলমান পরিস্থিতির কারণে পর্যটকরা তাদের হাউসবোটের বুকিং বাতিল করেছেন। এতে আমরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি।
সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, এই মৌসুমে পর্যটনে যে পরিমাণে ধস নেমেছে এবং যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে ব্যবসায়ীদের। সেইসঙ্গে ৩ দফা বন্যা ও চলমান আন্দোলনের কারণে এ জেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে।