নিজস্ব প্রতিবেদক,
সিলেট অঞ্চলে দ্বিতীয় দফার বন্যায় সাত লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দি। মাঝে কিছুদিন পানি কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু গত তিন দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত সোমবার থেকে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন গ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে জলাবদ্ধতার মধ্যে আটকে থাকা মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে আসতে শুরু করেছে সিলেট নগরীতে। তারা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছে।
গত সোমবার দিন ও রাতে টানা বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। গতকাল মঙ্গলবার সকালেও বেশ কিছু সময় বৃষ্টি হয়। এ কারণে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, গোয়াইন, পিয়াইনসহ প্রতিটি নদনদীর পানি বেড়েছে। গতকাল সিলেটের পাঁচ নদীর পানি ছয়টি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া সকাল পর্যন্ত আগের ২৭ ঘণ্টায় অন্তত ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী তিন দিন সিলেটে ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সিলেটে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে ধারণা আবহাওয়া অধিদপ্তরের।
জানা গেছে, নতুন করে গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে ১৫১টি গ্রাম, হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নতুন করে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। উপজেলা প্রশাসন জানায়, বর্তমানে প্রায় ২৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা এবং ১৫১টি গ্রাম প্লাবিত। প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমি নিমজ্জিত। ১৩টি ইউনিয়নে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১৯ হাজার ৭৫০টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯৮ হাজার ৬০০ জন। এ পর্যন্ত ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতে ৮১টি পরিবার ও ২৯টি গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে। ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্যা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত।
উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে কাজ করবেন।
লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, এবারের দু’দফা বন্যার পর মনে করেছিলাম, আর বন্যা হবে না। কিন্তু পূর্বাভাসে ফের বন্যার শঙ্কার কথা বলায় গত ২৭ জুন সিলেট নগরীর টিলাগড়ে বাসা ভাড়া নিয়েছি। গত কয়েকদিন স্বজনের বাড়িতে ছিলাম। এভাবে আর ভালো লাগছে না।
ওসমানীনগরেও ২৬২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে কুশিয়ারা তীরবর্তী সাদিপুর ইউনিয়নের লামা তাজপুর গ্রাম পুরোটাই এখন পানির নিচে। ওই গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। গোয়ালাবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক দিলীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় বিশ্বদ্যালয়ের ডিগ্রি পরীক্ষা। আমাদের প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলার পরীক্ষাকেন্দ্র। অথচ চারদিকে পানি আর পানি। অনেক এলাকায় বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ। এ অবস্থায় পরীক্ষায় উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি।
সুনামগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বেড়েছে সুরমাসহ সব নদীর পানি। সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, আজ বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি হবে, যা ৫ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা আছে।
এরই মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় অনেক রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। শহরের সুরমা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যার পানি ঢুকেছে। ছাতক উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে আছে। পৌরসভার মণ্ডলীভোগ, ভাজনামহল, কুমনা লেবারপাড়া, তাতিকোনা, চরেরবন্দ, মঙ্গলপাড়া, বৌলাসহ কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।