বিশেষ সংবাদদাতা,
বিশ্বকাপ শেষে তানজিদ তামিম, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলীর ব্যাটিং নিয়ে প্রচুর সমালোচনা চলছে। সবার একটাই কথা, বোলাররা অবদান রাখলেও ব্যাটাররা কিছুই করতে পারেননি। উল্টো ডুবিয়েছেন দলকে। ব্যাটারদের অনুজ্জ্বল ও অকার্যকর ব্যাট চালনার কারণেই বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি। গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা আর সুপার এইটে আফগানিস্তানকে হারানো সম্ভব হয়নি।
তবে জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন ব্যাটারদের ঢালাও সমালোচনা করতে নারাজ। আজ বুধবার জাগো নিউজের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সার্বিক পারফরম্যান্সের চুলছেড়া বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার টাইগার ব্যাটারদের কৌশল দক্ষতার সমালোচনা না করেননি। তাদের সাহস ও সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাস আর আস্থা কম ছিল বলেই উল্লেখ করেন তিনি।
হাবিবুল বাশারের মূল্যায়ন, ‘গ্রপ পর্বের ব্যাটিং নিয়ে আমি বিচারকের ভূমিকায় যেতে চাই না। প্রথম পর্বে যে মাঠে খেলা হয়েছে, তার উইকেট তেমন ভালো ছিল না। মানে স্বাচ্ছন্দ ও সাবলীল ব্যাট চালনায় সমস্যা ছিল। সেখানে সবাই স্ট্রাগল করেছে। ওই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। তাই ব্যাটিং নিয়ে আমার তেমন কোনো প্রশ্ন নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলেরও সেখানে হাত খুলে খেলতে কষ্ট হয়েছে। ১০০ রানের আশেপাশের লক্ষ্য ছুড়ে দিতে কষ্ট হয়েছে। আপনি দেখেন, বড় দলগুলোই ফাস্ট রাউন্ডে কষ্ট করে ব্যাট করেছে।’
তবে সুপার এইটে নিজ দলের ব্যাটিং ভালো লাগেনি বাশারের। তার অনুভব, সেরা আটে বাংলাদেশের ব্যাটাররা সাহস ও আস্থাহীনতায় ভুগেছেন।
সুমনের ভাষায়, ‘দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে টি-টোয়েন্টি খেলতে যে সাহস দেখানো দরকার, সেটি দেখাতে পারিনি। সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাসও প্রকাশ করতে পারিনি।’
টাইগার ব্যাটারদের দক্ষতা নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই বাশারের। তিনি বলেন, ‘দক্ষতা পরে আসবে। আর দক্ষতা অনুযায়ী আমরা খুব পিছিয়ে নেই। আমি মনে করি না, আমাদের স্কিলে তেমন ঘাটতি আছে। আমরা দক্ষ। কিন্তু আমাদের মধ্যে বিশ্বাস ও সাহস দুটিরই কমতি ছিল।’
সেটা কেন, প্রথম রাউন্ডে ভালো ব্যাটিং করতে না পারার জন্য?
বাশারের জবাব, ‘নাহ, তা মনে হয় না। প্রথম রাউন্ডে সবারই কষ্ট হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলনামূলক ভালো কন্ডিশনে বাকি দলগুলোর ব্যাটাররা রান পেতে শুরু করেছে। আমরা তা পারিনি।’
ব্যাটিংয়ের মতো পুরো দলের টিম পারফরম্যান্সকেও দুইভাবে দেখতে চান হাবিবুল বাশার।
বাশারের মূল্যায়ন, ‘প্রথম রাউন্ড খারাপ ছিল না। যেখানে খেলা হয়েছে উইকেট ও পারিপার্শিকতার কারণে সব দলই স্ট্রাগল করেছে। সেখানের ফলাফল বিবেচনায় আমার মনে হয় আমরা ভালো করেছি। দ্বিতীয় রাউন্ডে আসাটাও কোনোঅপ্রত্যাশিত ব্যাপার নয়। এটাও স্বাভাবিক। এটাই হওয়ার কথা। কিন্তু এই রাউন্ডে আমরা মোটেই ভালো খেলিনি। আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমরা যেমন খেলি, তার সঙ্গে এই পারফরম্যান্সও যায় বলে মনে হয় না।’
‘আসলে খেলার প্রতি যে অ্যাপ্রোচ ছিল, সেটি প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে প্রথম ২ ম্যাচে খেলার ধরন খুবই প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের মানের সঙ্গে যায় না। উচিতও না। আমার মনে হয় তারই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।’
জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক মনে করেন, টেস্ট খেলুড়ে দল হিসেবে বাংলাদেশের উচিত ছিল সেমিফাইনাল নিশ্চিতের জন্য খেলা এবং সাধ্যমতো চেষ্টা করা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামা উচিত ছিল। তারপরও যখন সেটা হলো না। তখন আমাদের অন্তত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া উচিত ছিল। ১১৫ রান করতে না পারাটা ঠিক হয়নি। মনে হয় না উইকেট তত খারাপ ছিল। বরং বৃষ্টি হওয়ায় উইকেট একটু সহজ হয়ে পড়েছিল।’