Friday, November 8, 2024
Homeসিলেট বিভাগসিলেটবানের পানিতে রান্না, সেই পানিতে তৃষ্ণা নিবারণ

বানের পানিতে রান্না, সেই পানিতে তৃষ্ণা নিবারণ

বিশেষ প্রতিনিধি,

 

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিগাঁও ইউনিয়নের গ্রাম কচুয়ারপার। বন্যার পানিতে ডুবে আছে চারদিক। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা। সেই ভরসার নৌকাও নেই সবার। তাই বেশিরভাগ সময়েই অন্যের নৌকার ওপর ভরসা করতে হয় এই গ্রামের বাসিন্দাদের। ফলে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন তারা। বিশেষ করে বানের পানিতেই রান্নাবান্না করছেন এমনকি পানের জন্যও ব্যবহার করছেন একই পানি। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে কয়েকগুন। অভিযোগ রয়েছে, বন্যার পর থেকে কেউই তাদের খোঁজ নেননি। পাননি কোনো ত্রাণ সহায়তা ও জরুরি ওষুধপত্র।

 

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সরেজমিনে কচুয়ারপার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বাড়ির চারপাশ পানিতে থৈ থৈ করছে। শিশু-কিশোররা খেলছে এসব পানিতে। নৌকা যত সামনে যায় পানির গভীরতাও তত বেশি। এখনো বেশিরভাগ বাড়ির উঠানে বন্যার পানি রয়েছে। বন্যার পানি কমছেও খুবই ধীর গতিতে। যত দূর যাওয়া হবে ততই মনে হবে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন এই গ্রামটি।

 

 

এই গ্রামের বাসিন্দা বশির মিয়া বলেন, বন্যার শুরু থেকেই মানবেতর জীবন পার করছেন গ্রামের বাসিন্দারা। সড়ক থেকে দূরে হওয়ায় অনেকেই এই গ্রামে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসতে পারেন না। গ্রামটি না চেনাও একটি কারণ। তাই নিজ দায়িত্ব নিয়ে পরিচিত অনেকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি গ্রামে যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা যায়।

 

 

তিনি আরো বলেন, আমার ডাকে সাড়া দিয়ে রোটারি ক্লাব অব সিলেট নর্থের সদস্যরা ত্রাণ নিয়ে আসেন। এগুলো বিতরণ করার জন্য তাদের নিয়ে এসেছি।

 

 

সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দুরে কচুয়ারপাড় গ্রাম। গোয়াইনঘাট উপজেলার এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সারিগোয়াইন নদী। শুকনো মৌসুমেও এই গ্রামের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। কাঁচা রাস্তাঘাটের কারণে যান চলাচলও হয় না খুব একটা। আর বর্ষা এলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গ্রামটি। দূর থেকে দেখলে কচুয়ারপাড়ের অস্তিত্ব বোঝা দায়।

 

 

গ্রামের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটে দুই দফা বন্যায় পুরো নি:স্ব গ্রামের বাসিন্দারা। আগের দফার বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগেই আরেকদফা বন্যার ধাক্কায় পুরো গ্রাম প্লাবিত। গ্রামের একমাত্র মসজিদও পুরো ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে পানি পানের সকল টিউবওয়েল। গ্রামে আশ্রয়কেন্দ্র ছোট হওয়ায় বানের পানি নিয়েই বাড়িতে বাস করছেন তারা।

 

 

বানের পানির দিকে আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা গ্রামের বয়োজেষ্ঠ্য বাসিন্দা সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, প্রথম দফা বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে যায়। এরপর পানি পুরোপুরি শুকিয়ে আগেই ঈদের আগের দিন থেকে পানি বাড়তে থাকে। ঈদের দিন ভিটেটাও তলিয়ে যায়। ঘরের একটি কক্ষ কোনোমতে শুকনো ছিল। সেই কক্ষেই স্ত্রী সন্তানদের আছি। খুব কষ্টে সময় পার করছি আমরা। বানের পানি পান করছি। এই পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।

 

 

একই গ্রামের উজ্জ্বল আহমদ বলেন, বাড়িঘরের সঙ্গে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েলটিও। যার কারণে বৃষ্টির পানিই ভরসা ছিল আমাদের। কিন্তু গতকাল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে বানের পানি পান করতে হচ্ছে।

 

 

এদিকে, ত্রাণ না পাওয়া নিয়েও অনেকটাই হতাশ গ্রামের বাসিন্দারা। রোটারি ক্লাব অব সিলেট নর্থ এর ত্রাণ বিতরণের সময় গ্রামের বাসিন্দা জমসেদ আলী বলেন, ইঞ্জিন নৌকা পেলে ঘর থেকে বের হওয়া যায়। নৌকা ছাড়া বের হওয়ার কোনো পথ নেই। নৌকা ছাড়া বাজার-হাট করা সম্ভব হয় না। যাদের নৌকা আছে তারা মোটামুটি চলতে পারছেন। আমরা ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল।

 

 

রোটারি ক্লাব অব সিলেট নর্থের ইলেক্ট প্রেসিডেন্ট (২০২৪-২৫) প্রকৌশলী পনির আলম হাওলাদার বলেন, শুকনো খাবার বিতরণের জন্য আমরা এসেছিলাম। আসার পর গ্রামের মানুষের অসহায় অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়ে গেছে। যে পরিমাণ ত্রাণ নিয়ে এসেছি এটা কিছুই না। বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments