নিজস্ব প্রতিবেদক,
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টির কারণে সুনামগঞ্জে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এমনকি পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা। ফলে বলা যায়, তিন হাজার ৭৪৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলা এখন ভাসছে বানের জলে। এতে দুর্ভোগ আর দুর্দশায় আর হতাশায় দিন কাটছে সুনামগঞ্জের মানুষের। গত তিনদিন ধরে জেলার অন্তত ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর পাড় থেকে পানি কিছু কমলেও এখন শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, হাজিপাড়া, নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, হাছননগর, মল্লিকপুর, নবীনগর ও কালীপুর এলাকায় কোথাও কোমর থেকে হাটু সমান পানি রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌরশহরের নতুন পাড়া এলাকার দোলন দাস জানান, গত তিনদিন ধরে নতুন পাড়ায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ঘরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। ঘরে খাবারও নেই। কেউ এসে দেখেও না মানুষ কতটা অসহায় হয়ে আছে।
একই এলাকার মিঠুন জানান, পানি এখনো কোথাও হাটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান। । আতঙ্ক কাটছেই না। আরো বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পানি আরো বাড়বে। পানিতে থাকতে থাকতে মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ শহরতলী ইসলামপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন জানান, ঈদের আগে থেকে এই এলাকায় পানি এসেছে। আমরা চারদিন ধরে বন্যার পানির নিচে তলিয়ে আছি, কেউ দেখে না। সব জায়গাতে পানি থাকায় ঘর থেকে বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না। ঘরে খাবার নেই, ওষুধ নেই। আমাদের অসহায়ত্ব দেখারও কেউ নেই। আমাদের ত্রাণ লাগবে, খাবার লাগবে। যদি পারেন আমার খাবার দেন। আমাদের বাচ্চাদের খাবার লাগবে।
এদিকে এখনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জের সঙ্গে ছাতক, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলা। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার সব পর্যটন স্পট।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, এরই মধ্যে ৫৪১ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসি মানুষ। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়নে ইউনিয়নে মেডিকেল গঠন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো মামুন হাওলাদার জানান, ২৪ ঘণ্টারন মধ্যে পানি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস থাকায় পানি আরো বৃদ্ধি হতে পারে।