বিশেষ প্রতিনিধি,
গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বেশিরভাগ জেলায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সিলেট শহর ও সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকা এখন পানির নিচে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও সারি-গোয়াইন নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী সাতদিন ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ ছাড়া পুরো বর্ষা মৌসুম সামনে পড়ে রয়েছে। এ অবস্থায় সিলেট অঞ্চলে আরো কয়েকবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে, ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন । দুই বছর পর ঠিক একইসময়ে আরেকটি ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি তারা। জেলার অধিকাংশ উপজেলা এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে অতীতেও ভারী বৃষ্টিতে এত ক্ষতি হয়নি, এখন কেন বারবার বন্যা দেখা দিচ্ছে সিলেটে?
সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই দুই জেলায় এখন বছরে ৪-৫ বার ছোট-বড় বন্যা দেখা দেয়। বন্যার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, অতিবৃষ্টি, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানি বহনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সড়ক নির্মাণ, পাথর উত্তোলন বন্ধ, বন্যা প্রতিরোধ বাঁধে পানি উন্নয়ন কর্তাদের লুটপাট ও অনিয়ম।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটের উজান ঘেঁষা মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও আসামে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে প্রতিনিয়তই ঢল নামছে। সেইসঙ্গে সিলেটের প্রধান নদীগুলো বিশেষত- সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও গোয়াইনসহ বেশিরভাগ নদীর তলদেশই ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়াও নগর ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জলাশয় ভরাট-দখল হওয়াসহ সবমিলিয়ে বৃষ্টির পানির ঢল ধরে রাখতে পারছে না প্রাকৃতিক এই উৎসগুলো। ফলে পানি উপচে দ্রুত বসতি ছাড়াও শহর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
এছাড়াও হাওরে অপরিকল্পিত ঘর-বাড়ি, বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ, কৃষিকাজসহ নানা তৎপরতার কারণে পানি ধারণের ক্ষমতা আরও কমে গেছে। সেই সঙ্গে আমাদের দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নদীগুলোর চারপাশে বাঁধ দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত নিয়ন্ত্রিত পন্থায় ফ্লাডিংকে কন্ট্রোল করছে বলেও মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। সবমিলিয়ে সিলেটের এসব নদী-জলাশয় খনন ও পরিকল্পিত উন্নয়ন ছাড়া সহসাই বন্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ উপজেলায়ও দেখা দিয়েছে বন্যা। সিলেটে বারবার বন্যা হওয়ার কারণ সম্পর্কে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন।
তিনি জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জ নিম্নাঞ্চল এলাকা। একসঙ্গে ভারতের চেরাপুঞ্জি, আসামে ও সিলেটে বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে। এতে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের নদী নালা খনন করে তার ক্যাপাসিটি বাড়ানো আশু কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নদী নালা খাল ভরাটের কাজ হচ্ছে না যা দুঃখজনক। আমরা হাওড় এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন কাজ করেছি, সড়ক নির্মাণ করেছি এটা কতটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে হয়েছে এবং এর ফলে পানির প্রবাহে কতটা বাঁধা পাচ্ছে তা নিয়েও ভাবতে হবে। সরকার এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাওড় এলাকায় নতুন করে বড় সড়ক নির্মাণ না করার।