বিশেষ প্রতিনিধি,
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী ও হাকালুকি হাওর পাড়ের উপজেলা জুড়ীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ঢলের পানিতে উপজেলার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জুড়ী শহর এবং উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ইতোমধ্যে অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।
বন্যায় উপজেলার জায়ফরনগর ও পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলেও ফুলতলা, সাগরনাল, পূর্ব জুড়ী ও গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এ ছাড়া জুড়ী টু ফুলতলা এবং জুড়ী টু লাঠিটিলা আঞ্চলিক মহাসড়কে বন্যার পানি ওঠায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকার সড়ক। সেই সঙ্গে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি ও দোকানপাট, মাছের ঘের। এদিকে, ঢলের পানি উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই অঞ্চলের মানুষজন। অনেকেই তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা উঁচু এলাকায় আত্মীয়স্বজনদের বাসায় ছুটছেন। নিম্নাঞ্চলের মানুষদের অনেকেই জানিয়েছেন, ঢলের পানিতে তাদের ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। এখন নিরুপায় হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছি।
এদিকে মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেলে সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়কমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন এমপি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জায়ফরনগর ও পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। জুড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ও মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের খোঁজখবর নেন। এ সময় তিনি এসব পরিবারের মধ্যে রান্না করা খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জুড়ী ইউএনও লুসিকান্ত হাজং, থানার ওসি এসএম মাইন উদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য বদরুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, বড়লেখা উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম হেলাল উদ্দিন, জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা, জুড়ী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সুমন, জুড়ী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সমরজিৎ সিংহ বলেন, বন্যার্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য ৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বন্যায় ইতোমধ্যে উপজেলার ৬৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জুড়ীতে ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২৩১টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
জুড়ী ইউএনও লুসিকান্ত হাজং জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি বলেন, জুড়ীতে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আমরা শুকনো খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
বড়লেখা-জুড়ী আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন এমপি বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্ত মানুষের মাঝে রান্না করা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।