নিজস্ব প্রতিবেদক::
এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে বিশ থেকে পঁচিশ জন শিক্ষার্থী জানতে পারে তারা শিক্ষার্থী নয়।এমনই ঘটনা ঘটেছে বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে ঐসব শিক্ষার্থী।
অনলাইনে ভর্তির সময় শেষ হওয়ায় ওই কলেজের দুই কর্মচারী অফলাইনে ভর্তির কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। সকল ফি পরিশোধ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর কলেজের দুই কর্মচারী ভর্তি দাবি করে প্রতারণা করেছে। হারুন মিয়া ও আব্দুল হান্নান অফলাইনে ভর্তির কথা বলে ২০ থেকে ২৫ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। কলেজের প্যাডে ভর্তির রশিদ দেওয়া আছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, এই দুই বছর ধরে কলেজে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা দিয়েছেন। এইচএসসি ফরম পূরণসহ বিভিন্ন ফি বাবদ তাদের কাছ থেকে ১৫০০০/- থেকে ৫০,০০০/- টাকা আদায় করা হয়। এরপর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র আনার সময় তারা জানতে পারেন ভর্তি প্রক্রিয়া ভুয়া।
ঘটনা জানাজানি হলে অভিযুক্ত হারুন পালিয়ে যায়। তবে অপর আসামি আবদুল হান্নান শিক্ষার্থীদের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। অভিভাবকরা অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
পরীক্ষা দিতে না পারা শিক্ষার্থীদের একজন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ২০২১ সালে এসএসসি পাস করার পর নিয়ম অনুযায়ী তিনিসহ অন্তত ২৫জন অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনে তারা বগুড়ার একাধিক কলেজের নামে চয়েস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার একটিও কার্যকর হয়নি। পরে তারা লোকমুখে শুনতে পান যে, বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে অফলাইনে এইচএসসিতে ভর্তি করা হচ্ছে। এরপর তারা ওই কলেজের দুই পিওন হারুনুর রশিদ এবং আব্দুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভর্তির জন্য তারা ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।
শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি হারুণের কাছে ১০ হাজার টাকা দিলে তিনি আমাকে কলেজে ভর্তির রশিদ দেন। তারপর আমি কলেজের ইউনিফর্ম বানিয়ে ক্লাস করতে থাকি। পরে পরীক্ষা এবং ফরম পূরণসহ বিভিন্ন সময় কলেজে এবং বোর্ডে জমা দেওয়ার কথা বলে তিনি আরও ৪০ হাজার টাকা নেন। নিয়মিত ক্লাস করার পাশাপাশি আমি টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেই এবং ফরম পূরণ করি। চুড়ান্ত পরীক্ষায় বসার জন্য প্রবেশপত্র চাইলে তিনি ১৬ আগস্ট সকাল ১০টায় কলেজে যেতে বলেন। তবে ওইদিন কলেজে গেলে তিনি বলেন, প্রবেশপত্র প্রিন্ট হয়নি। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে আনতে হবে। আমি রাজশাহী যাচ্ছি তোমরা বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা কর।’
শারমিন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রবেশপত্র নেওয়ার জন্য হান্নান পরীক্ষার দিন অর্থাৎ ১৭ আগস্ট ভোরে কলেজে যেতে বলেন। তবে সকাল ৬টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেও তাকে কলেজে না পেয়ে ফোন দিলে হান্নান রিসিভ করেননি। পরে আমিসহ অন্যরা পরীক্ষাকেন্দ্র পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে গেলে সেখানে আমাদের কোনো সিট খুঁজে পাইনি। এরপর কলেজে এসে যোগাযোগ করে জানতে পারি আমাদের ভর্তিই করানো হয়নি। ভর্তির রশিদসহ যেসব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছিল সবই জাল ছিল।’
লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানান কলেজের শিক্ষার্থী ও অবিভাবকবৃন্দ।