Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the td-cloud-library domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/sylheterkagoj/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
জেনে নিন কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত - Sylheter Kagoj : সিলেটের কাগজ |
Monday, April 21, 2025
Homeইসলামজেনে নিন কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

জেনে নিন কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

 

ধর্ম ডেস্ক,

কোরবানি। কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত কী? সাহাবায়ে কেরাম নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসুল! কোরবানি কী? তিনি সাবলিলভাবে এ প্রশ্নের গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরেছেন। নবিজী এ প্রশ্নের কী উত্তর দিয়েছিলেন?

 

কোরবানি কী?

 

 

উর্দূ ও ফার্সিতে কোরবানি শব্দটির ব্যবহার হলেও এটি করব বা কোরবান (قرب বা قربان) আরবি শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। যার অর্থ- ‘নৈকট্য বা সান্নিধ্য’। কোরবান হলো, প্রত্যেক সেই বস্তু, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। আর সেখান থেকেই ফার্সি বা উর্দু-বাংলাতে ‘কোরবানি’ শব্দটি গৃহীত হয়েছে।

 

আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার আশায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কোরবানির নিয়তে উট, গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়া জবাই করাই হলো কোরবানি। আর এ পশুর পশম যতবেশিই হোক না কেন, প্রতিট পশমের বিনিময়ে রয়েছে একটি করে সওয়াব। হাদিসে পাকে এসেছে-

 

হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, সাহাবায়ে কেরাম একদিন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই কোরবানি কী?

 

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাত (রীতিনীতি)। তাঁকে আবারো জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতে আমাদের কি ফজিলত (পূণ্য রয়েছে)?

 

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘(কোরবানির জন্তুর) প্রতিটি লোমের (পশমের) পরিবর্তে (একটি করে) নেকি রয়েছে।’ তাঁরা আবারো জিজ্ঞাসা করলেন, ’পশম বিশিষ্ট পশুর বেলায় কী হবে? (পশুর তো পশম অনেক বেশি)। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘পশমওয়ালা পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকি রয়েছে।’ সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

 

কোরবানি আল্লাহর নির্দেশ

 

মুমিন মুসলমানের জন্য নির্ধারিত দিনে কোরবানি করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। কোরআন-সুন্নার নির্দেশনাও তাই। আল্লাহ তাআলা বলেন-

 

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

 

‘অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড় এবং কোরবানি কর।’ (সুরা কাউসার : আয়াত ২)

 

আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে নামাজ ও কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এ দুটি ইবাদত সবচেয়ে বেশি করেছেন। তিনি যেমন বেশি নামাজ আদায় করেছেন তেমনি বেশি কোরবানিও করেছেন।

 

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোরবানি করা প্রসঙ্গে হাদিসে একাধিক বর্ণনা রয়েছে। তাহলো-

 

১. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ (ও সুন্দর) দুই শিং বিশিষ্ট সাদা-কালো মিশ্রিত (মেটে বা ছাই) রঙের দুইটি দুম্বা কোরবানি করেছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

 

২. হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ বছর মদিনায় অবস্থান করেছেন। মদিনায় অবস্থানকালীন প্রত্যেক বছরেই কোরবানি করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)

 

৩. সামর্থ্যবানদের মধ্যে যারা কোরবানি করে না, তাদের প্রতি তিনি এভাবে হুশিয়ারী করেছেন। হাদিসে এসেছে-

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের ধারে-কাছেও না আসে।’ (মুসনাদে আহামদ, ইবনে মাজাহ, মুসতাদরেকে হাকেম)

 

৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো বছর কোরবানি থেকে বিতর থাকেননি। তিনি কর্মে দ্বারা যেমন কোরবানি করতে অনুপ্রাণিত করেছেন আবার বক্তব্য দিয়ে কোরবানির প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিসে এসেছে-

 

‘যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাজের আগে (পশু) জবেহ করে সে নিজের জন্য জবেহ করে। আর যে নামাজের পর জবেহ করে তার কোরবানি সিদ্ধ হয় এবং সে মুসলমানদের তরিকার অনুসারী হয়।’ (বুখারি)

 

মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে, কোরবানি কোরআন-সুন্নার নির্দেশ ও পালনীয় ইবাদত। এ ব্যাপারে কারো কোনো বিরোধ নেই। তবে কোরবানি করা ওয়াজিব না সুন্নাত; এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যে কারণে সম্পদের মালিকের জন্য অনেক ইসলামিক স্কলারগণ কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মতামত দেন। আবার অনেক সাহাবা, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ এবং ইসলামিক স্কলারগণ কোরবানিকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন।

 

কোরবানি মুসলিম উম্মাহর আদর্শ ও ঐতিহ্য

 

কোরবানির ইতিহাস অতি প্রাচীন। কোরআনে হাবিল-কাবিলের ঘটনাই তার প্রমাণ। ইসলামে প্রথম কোরবানি এটি। হাবিল প্রথম মানুষ, যিনি আল্লাহর জন্য একটি পশু কোরবানি করেন। ধর্মীয় বিবরণ থেকে জানা যায়, হাবিল একটি ভেড়া এবং তার ভাই কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন।

 

সে সময় আল্লাহর নির্ধারিত শরিয়ত বা পদ্ধতি ছিল এই যে, আকাশ থেকে আগুন নেমে আসবে এবং যার কোরবানি কবুল হবে তার জিনিসকে আগুন গ্রহণ করবে। অর্থাৎ অগুন সে জিনিসকে জালিয়ে ভষ্ম করে দেবে। সেই অনুযায়ী, আকাশ থেকে নেমে আসা নেককার হাবিলের জবেহকৃত পশুটির কোরবানি গ্রহণ করে। অন্যদিকে কাবিলের ফসলস্বরূপ প্রদত্ত কোরবানি প্রত্যাখ্যাত হয়।

 

পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা ইসলামের নবি ও রাসুল, মুসলিম জাতির পিতা, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লামকে স্বপ্নযোগে এ মর্মে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ দেন, ‘তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করো। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আদিষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর জন্য ১০টি উট কোরবানি করেন। কিন্তু পুনরায় তিনি কোরবানি করার জন্য আদেশ প্রাপ্ত হন। তখন তিনি আবারও ১০০টি উট কোরবানি করেন।

 

তারপরেও তিনি একই আদেশ পেয়ে ভাবলেন, আমার কাছে তো এ মুহূর্তে সবচেয়ে প্রিয়বস্তু হলো- পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালাম। এছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কোরবানি করতে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। যখন হজরত ইবরাহিম তার পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার জন্য গলায় ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তার কোনো ক্ষতি হয়নি।

 

ঐতিহাসিক এই ধর্মীয় ঘটনাকে স্মরণ করে সারাবিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর ঈদুল আজহা উৎসব পালন করে। ইসলামে হিজরি ক্যালেন্ডারের ১২তম চন্দ্রমাস জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানি করার সময় হিসাবে নির্ধারিত। এ দিনে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দেন।

 

তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা উত্তম যে, সামর্থ্য থাকলে কোরবানি আদায় করাই উত্তম। কোনোভাবেই কোরবানি থেকে বিরত না থাকা। সক্ষম হলে নিজের ও পরিবার-পরিজনের পক্ষ থেকেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করা। এর মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নির্দেশ মানা হয় তেমনি সাহাবাদের অনুসরণ ও অনুকরণও হয়। ফলে এতে রয়েছে বিশাল সওয়াবের হাতছানি।

 

কোরআন-সুন্নার এসব দিকনির্দেশনা থেকে প্রমাণিত যে-

 

কোরবানি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে অর্থ খরচ করে স্বার্থ ত্যাগ করে এ ইবাদত করতে হয়। কোরবানির পর পরিবার ও দরিদ্রজনের উপর কোরবানির পশুর গোশত খরচ করা হয় এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য হাদিয়া ও উপঢৌকন পেশ করার সুযোগ হয়। কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য করতে পেরেই মুমিন মুসলমান আনন্দ পেয়ে থাকে। মুমিনের সেই খুশিই হলো কোরবানির খুশি।

 

কোরবানি না করে কোরবানির টাকা গরিব-দুঃখীর মাঝে বণ্টন করে দিলে কোরবানির হক আদায় হবে না। কারণ কোরবানিতে আল্লাহর জন্য পশু জবাই করা হলো ইবাদত ও দ্বীন ইসলামের নির্দশন এবং প্রতীক। এ কারণেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন-

 

‘কোরবানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ এবং সমগ্র মুসলিম জাতির এক আমল। আর কোথাও কথিত নেই যে, তাঁদের কেউ কোরবানির পরিবর্তে তার মূল্য সাদকাহ করেছেন। আবার যদি তা উত্তম হতো তবে তাঁরা নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম করতেন না।’ (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া)

 

মনে রাখতে হবে

 

কোরবানি দ্বারা জবাই উদ্দেশ্য। সুতরাং পশু জবাই করা কোরবানির মূল্য সাদকাহ করা অপেক্ষা উত্তম। যদিও সে তা কোরবানির চেয়ে পরিমাণে বেশি হয়। কারণ, কোরবানিতে জবাই হলে উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কোরবানি সম্পর্কে বলেছেন-

 

১. فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

 

‘অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড় এবং কোরবানি কর।(সুরা কাউসার : আয়াত ২)

 

২. قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

 

‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)

 

সুতরাং কোরআন-সুন্নার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অর্থ দিয়ে নামাজ ও কোরবানির ইবাদত আদায় করলে হবে না। এর অন্যতম প্রমাণ হলো- হজের ক্ষেত্রে যারা তামাত্তু ও কিরান হজ করবেন, তারা যদি কোরবানির পরিবর্তে তিনগুণ বা তারচেয়েও বেশি সাদকাহ করে তাতে তার বিনিময় হবে না। ঠিক কোরবানিও তাই। আর আল্লাহ তাআলাই বেশি জানেন।

 

কোরবানি নামাজের মতো স্বাতন্ত্র ইবাদত। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে কোরবানির গুরুত্ব, ফজিলত ও সাওয়াব অনেক বেশি। আর এটা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত হওয়ার কারণেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তা পালন করেছেন। সে কারণে তা উম্মতে মুহাম্মাদির সামর্থ্যবানদের জন্যও আদায় করা আবশ্যক।

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সামর্থ্যবানকে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। কোরবানির ফজিলত ও সওয়াব পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments