মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি :
১৭ জুন দেশব্যাপী পালিত হবে মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম ধমীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আর ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ পশু কোরবানি। এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য মৌলভীবাজার জেলায় মোট ৮৪ হাজার ৮শ ১২টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। যার বেশিরভাগই যোগান দেবেন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থায়ী ও মৌসুমী খামারিরা। গবাদিপশু কোরবানির এমন পরিসংখ্যান বিভিন্ন উপজেলা ও জেলার খামারিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে অনুযায়ী করা হয়েছে বলে প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
বর্তমানে ঈদকে সামনে রেখে খামারিরা নিজেদের সেরা ও স্বাস্থ্যবান গবাদিপশুটি হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। এমনিতেই এই সময়ে গবাদি পশুর খাবারের দাম অনেক চড়া। খাবারের দাম বাড়ার অজুহাতে ব্যাপারীরাও বাড়িয়েছেন গরুর দাম। এমন পরিস্থিতিতে খামারিরাও ভাল দামের প্রত্যাশায় প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত। দেশিয় পদ্ধতিতে খড়, তাজা ঘাস ও ভুষিসহ পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করেছেন খামারিরা। তবে গরু মোটাতাজাকরণে কোন খামারি-ই ক্ষতিকর এন্টিবায়েটিক খাওয়াচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা।
জেলা সদরের মোস্তফাপুর, কনকপুর, শেরপুর কামালপুর সহ বেশ কয়েকটি এলাকার খামার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ঈদুল আজহাকে ঘিরে খামারিদের ব্যস্ততা বেড়েছে আগের থেকে। তবে খামারিদের বড় শঙ্কা হচ্ছে ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে চোরাই পথে গরু প্রবেশ নিয়ে। এটি বন্ধ না হলে ভালো দাম পাওয়া নিয়ে প্রভাব পড়বে বাজারে। এ বিষয়ে খামারিরা চান প্রশাসনের শক্ত অবস্থান আর সীমান্তে কঠোর নজরদারী।
সদর উপজেলার মোস্তফাপুরে শতাধিক দেশী-বিদেশী গবাদিপশু নিয়ে গড়ে তোলা আরিয়ান ডেইরি ফার্মের স্বত্তাধিকারী ব্যবসায়ী সৈয়দ ফয়সল বলেন, গরুর খাবারের দাম এক বছরের ব্যবধানে দিগুণ হয়েছে, তবুও ভাল দাম পাওয়ার প্রত্যাশা আমাদের। তিনি বলেন, অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান বন্ধে সরকার চেষ্টা করছে। তারপরও যদি ভারতীয় গরু বাজারে আসে তাহলে খামারিরা নিরুৎসাহিত হবে। আমার মতো অনেকে খামার বন্ধ করে দেবে।
তরুণ এই ব্যবসায়ীর ফার্মে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো বড় বড় ষাঁড় বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় মোট ৮৪ হাজার ৮শ ১২টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। খামার রয়েছে ৫ হাজার ৩শ ৬৯টি। কোরবানির লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার ৫শ ৪২টি গবাদিপশু। আর ঘাটতি রয়েছে ১৪ হাজার ৭শ ৩০টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আশরাফুল আলম খান বলেন, ঘাটতি যেগুলো রয়েছে, সেগুলোকে ঘাটতি বলা যাবেনা। কারণ, কোরবানির জন্য যে ঘাটতি রয়েছে তা ব্যক্তিগতভাবে লালন করা গবাদি পশুদ্বারা পূরণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে যাতে অবৈধভাবে গরু প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করা হয়েছে। ওই বৈঠকে সীমান্ত দিয়ে যাতে ভারতীয় গরু প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিতে কার্যক্রর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
জেলা জুড়ে মোট ২১টি স্থায়ী গবাদি পশুর হাট থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে অস্থায়ী পশুর হাটের সর্বশেষ পরিসংখ্যানের তথ্য প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেও জানা সম্ভব হয়নি।