বিশেষ প্রতিনিধি,
নবনির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খায়রুন আক্তার
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ‘চা কন্যা’ খায়রুন আক্তার। চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত তিনি। আর এ পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন খায়রুন। প্রতীক পান ‘কলস’। শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে থাকা খায়রুন শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেছেন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন। ফলে বাগানজুড়ে আনন্দ উৎসব চলছে।
চতুর্থ ধাপে নির্বাচনে চা পাতা উত্তোলন করে আপনাদের সেবায় এসেছি বলে প্রচারণা চালানো চা শ্রমিক খায়রুন আক্তার ৭৬ হাজার ভোট পেয়ে চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। হতদরিদ্র চা শ্রমিকরা মাথাপিছু ২০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে তার এ নির্বাচনের ব্যয় জোগাড় করেন।
বুধবার (৫ মে) চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে রাতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার এ ফল ঘোষণা করেছেন। এ সময় কলস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া খায়রুন আক্তারকে ৭৬ হাজার ২৮১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, এ উপজেলায় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০৮ ভোটের মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার ৮০৪টি ভোট প্রয়োগ হয়েছে। এরমধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটার চা শ্রমিক। নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৪৮ শতাংশ পেয়ে যেখানে লিয়াকত হাসান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হন সেখানে চা শ্রমিক খায়রুন আক্তার পান ৭০ শতাংশের বেশি ভোট।
খায়রুন আক্তারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী অপর চার প্রার্থীর মধ্যে আবিদা খাতুন ফুটবল প্রতীকে ৮ হাজার ৮৭৩, হাঁস প্রতীকে কাজী সাফিয়া আক্তার ১২ হাজার ২১, পারুল আক্তার পদ্মফুলে ৩ হাজার ১৪৮ ও ইয়াছমিন আক্তার মুক্তা বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ৪ হাজার ১৬৮ ভোট পেয়েছেন। চা শ্রমিক খায়রুনের এ বিজয়ে চুনারুঘাট উপজেলায় চা শ্রমিকদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খায়রুন আক্তার চুনারুঘাটের চা বাগানগুলোতে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত। ছোটবড় শ্রমিকরা সবাই তাকে ‘দিদি’ বলে ডাকেন। নির্বাচনের আগে শ্রমিকরা সভা ডেকে ২০ টাকা করে গণচাঁদা তুলে জামানতের টাকা সংগ্রহ করেন। পরে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়।
খায়রুন আক্তারের বাবা নেই। চান্দপুর চা বাগানের পাশে মা মল্লিকা বেগমকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন। জনগণের টাকা ছাড়াও তিনি একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন।
২০১২ সালে খায়রুনের বাবার ক্যান্সার ধরা পড়লে গরু-ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসার পরও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ফলে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই তাকে পড়াশোনা ছেড়ে কাজে যোগ দিতে হয়। পাশাপাশি তিনি কথা বলেন শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে।
খায়রুন আক্তার বলেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিতরা বলে থাকেন, তারা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুদান পান না। সেই বিষয়টি যাচাই করার জন্য নির্বাচনে এসেছি। কীভাবে কাজ করব এখনো আমি জানি না। তবে সকল ভোটারের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই বলেও জানান তিনি।