নিজস্ব প্রতিবেদক,
বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ায় সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বন্যার্তরা বাড়ি ফিরতে শুরু করছেন। জেলার সব কটি নদীর পানি হ্রাস পাওয়া অব্যাহত রয়েছে। তবে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতচিহ্ন।
বানের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক পাকা ও গ্রামীণ সড়ক। স্থানে স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত এবং খানাখন্দ। ভেঙে পড়েছে অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি।
এলাকায় জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
বৃষ্টিপাত না হলে দু-এক দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে সিলেট নগরে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে। সুরমা তীরবর্তী কিছু এলাকা এখনো তলিয়ে আছে পানিতে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সিলেট ও পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টিপাত হয়।
ফলে সিলেটের সব কটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত বুধবার রাতে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে বন্যা দেখা দেয় সিলেট সদর, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায়। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, গত শুক্রবার পর্যন্ত সিলেটের আট উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছিলেন ৪ হাজার ৮০২ জন।
তবে গত শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করে। ফলে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়ি ফেরা শুরু করেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী জানান, বন্যায় সালুটিকর-গোয়াইনঘাট, গোয়াইনঘাট-সারিঘাট, গোয়াইনঘাট-রাধানগর, হাতিরপাড়া-ফতেহপুর সড়ক তলিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট ছাড়া বাকি সব সড়ক থেকে পানি নেমেছে। কিন্তু সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ গ্রামীণ কাঁচা সড়ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় উপজেলার ৮৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮৩ কোটি টাকার। আর ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে লাগবে আরও অন্তত ২০ কোটি টাকা।
কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মুমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যার পানি কানাইঘাট বাজার থেকে নেমে গেছে। এ ছাড়া পুরো উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ায় অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরছেন। জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, পুরো উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা, কুশিয়ারা, লোভা, সারি, ধলাই, পিয়াইন ও সারিগোয়াইন নদীর সব পয়েন্টে পানি কমেছে। তবে এখনো সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে এবং কুশিয়ারার পানি আমলসীদ ও শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ত্রাণ তৎপরতা : জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত আট উপজেলায় নগদ সাড়ে ১৫ লাখ টাকা, ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১২৫০ বস্তা শুকনো খাবার, ৯ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ৯ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।