সিলেট ব্যুরো,
পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি
সিলেটে অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
এছাড়া নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে বিশ্বনাথ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায়। বর্তমানে বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে পানি। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে।
নগরীর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সুরমা নদীর পানি বেড়ে এ নদীর তীরবর্তী এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গত দুদিন ধরে পানি প্রবেশ করেছে।
নগরীর তালতলা, জামতলা, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, উপশহর, যতরপুর, তেররতন সড়কে হাঁটুপানি। এদিকে সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে।
জানা গেছে, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বিশ্বনাথ ও বিয়ানীবাজারে একাধিক এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছে।
উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এসব উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পানির নিচে। সুরমা নদীর পানি পাঁচটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে এসব উপজেলায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী ৭ উপজেলায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৪ হাজার ৮০২ জন।
দুর্গতদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে মোট ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, বেশ কয়েকটি উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এদিকে সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকার ৭১০টি বিদ্যালয়ের ৪৬৫টিতে ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে।
জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস জানায়, জেলার ৫৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬২টি প্লাবিত হয়েছে। শুরুতে ৬০টি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। গোয়াইনঘাট উপজেলার ৪৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সবগুলোতেই ক্লাস হচ্ছে না বন্যার কারণে।
জৈন্তাপুরে ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র ছিল ২২টিতে। কোম্পানীগঞ্জের ৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও কানাইঘাটের ১৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। জকিগঞ্জের ১৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬টির মাঠে পানি রয়েছে।
গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টি নেই তারপরও পানি বাড়ছে গোলাপগঞ্জের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে। পাশাপাশি এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওড় পানিতে টইটম্বুর। বৃষ্টি কম হলেও পাহাড়ি ঢলের কারণে ক্রমেই বন্যার দিকে ধাবিত হওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন এলাকাবাসী।
শরীফগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম কবির উদ্দিন বলেন, এখন বৃষ্টি কম হলেও হাকালুকি হাওড়ে পানি বাড়ছে। তবে এখনো কোনো গ্রাম প্লাবিত হয়নি। এদিকে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় উপজেলা প্রশাসন সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।