নিজস্ব প্রতিবেদক,
দুদিন মর্গে পড়েছিলো মায়ের মরদেহ। হাসপাতালে ভর্তি দুই বছরের শিশুসন্তান। তবে তাদের কারও পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। দুদিন ধরে অনবরত কেঁদেই যাচ্ছিলো অবুঝ শিশুটি। অবশেষে মিলেছে নিহত নারী ও তার সন্তানের পরিচয়।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের পর মারা যাওয়া নারীর নাম জায়েদা বেগম (৩২)। আর আহত হওয়া তার দুই বছরের ছেলেসন্তানের নাম জাহিদ হোসেন।
জায়েদার বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার খুশিউড়া গ্রামে। তিনি এ গ্রামের রমিজ উদ্দিনের মেয়ে। কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. ফারুক মিয়ার সঙ্গে জায়েদার বিবিয়ে হয়। ফারুক স্থানীয় বাসিন্দা কফিল উদ্দিনের ছেলে। জায়েদার সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো। ফারুকের প্রথম স্ত্রীসহ আরও তিনটি সন্তান রয়েছে। যে কারণে জায়েদার সঙ্গে বিয়ে মেনে নেয়নি ফরুকের পরিবার। ফলে স্বামীর যোগাযোগ না থাকায় স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় শিশু জাহিদকে নিয়ে বসবাস করতেন জায়েদা। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার দিন রাতে তিনি রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হন।
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাত ৩টার দিকে রাস্তা পারাপারের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মা ও শিশুসন্তান দুজন গুরুতর আহত হন। শুক্রবার (১০ মে) ভোরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয়ে মা ও শিশুকে রক্তাক্ত অবস্থায় ভর্তি করা হয়। পরদিন রাতে মারা যান মা। তার মরদেহ রাখা হয় মর্গে এবং শিশুটিকে ভর্তি রাখা হয় ওই হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে।
এদিকে, সংবাদমাধ্যম এবং ফেসবুকে জায়েদা ও জাহিদের ছবি দেখে বোন এবং ভাগ্নেকে চিনতে পারেন সুনামগঞ্জের দোয়ারার খুশিউড়া গ্রামের রবিন মিয়া। তিনি রবিবার (১২ মে) ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান এবং নিজের পরিচয় দেন।
এসময় তিনি আহত শিশুর দায়িত্বও নিতে চান। তবে রবিবার বিকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়- মা ও শিশুর স্বজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত লাশ বা শিশু কারো কাছেই দেওয়া হবে না। আপাতত শিশুটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর কার্যালয়কে।
তবে সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী- এ দুর্ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিতে র্যাবের মহাপরিচালক এবং ময়মনসিংহ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো নজরে আনার পর সোমবার (১৩ মে) দুপুরে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন।
এছাড়া শিশুসন্তানকে আপাতত মামা পরিচয় দেওয়া সুনামগঞ্জের রবিনের হেফাজতে দেওয়ার নির্দেশ দেন উচ্চা আদালত। তবে শিশুটির অভিভাবকত্ব নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন দাখিল ও নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
নিহত জায়েদার বড় ভাই মো. রবিন মিয়া সোমবার সাংবাদিকদের জানান- বতর্মানে শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।